চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা প্রায় অকেজো : রয়েছে জনসাধারণের অসচেতনতাও

করোনা ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন লেনদেন করছেন সোনালী ব্যাংকের দেড়হাজার গ্রাহক

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ঝুঁকি থাকলেও চুয়াডাঙ্গার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কার্যালয়েই সামাজিক দূরত্ব না মেনে করছেন লেনদেন গ্রাহকরা। অনেকেই ব্যবহার করছেন না মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লোভসও। অন্যান্য ব্যাংকে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও তাপমাত্রা পরিমাপ যন্ত্রের ব্যবহার দেখা গেলেও এসব ব্যবহারের বালাই নেই সোনালী ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা শাখায়। অথচ সোনালী ব্যাংকেই লেনদেন হয় সবচেয়ে বেশি। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, জায়গা সংকট ও গ্রাহকদের অসচেতনতায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহকদের অতিরিক্ত চাপের কারণে তাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে লেনদেন করানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্দেশনা মেনেই কাজ করছেন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গার অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরেই কার্যকর নেই করোনা প্রতিরোধী সরঞ্জাম। হাসপাতাল, থানা, মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেসিং থাকলেও থাকে না সাবান, থাকে না পানি। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনাভীতি কমে যাওয়ায় কমেছে এসবের ব্যবহার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা লেনদেনে গ্রাহকদের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধির দিকে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। তাতে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ হবে সংক্রমণ।

গতকাল রোববার রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের চুয়াডাঙ্গা শাখা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, হাত ধোয়ার জন্য নেই কোনো বেসিং বা অন্য কোনো ব্যবস্থা। ভেতরে ঢুকতে তাপমাত্রা পরিমাপ যন্ত্র খোঁজ করেও পাওয়া তো দূরের কথা হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারও মেলেনি। ব্যাংকের অভ্যন্তরে রয়েছে গ্রাহকদের ব্যাপক ভীড়। যদিও এদিন পেনশন ভাতা প্রদানের তারিখ ছিলো না তবুও ভেতরে ঢোকাই যেনো দায়। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না বরং সবাই ঠেলাঠেলি করে কাউন্টারের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছেন। তাদের অনেকেরই নেই মাস্ক, নেই হ্যান্ড গ্লোভস। কারো কারো কাছে মাস্ক দেখা গেলেও তা ছিলো না যথাস্থানে। বোঝা গেলো অতিরিক্ত ভিড় এবং গরমের কারণে তারা মাস্ক খুলে একটু বাতাস নেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু হয়তো বুঝছেন না এতেই তাদের হতে পারে ভয়ানক বিপদ।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা শাখার এজিএম জাকির হোসেন বলেছেন, ব্যাংকের জায়গা সংকট তবে গ্রাহক অনেক বেশি। প্রতিদিন দেড়হাজার গ্রাহকতো লেনদেন করছেনই, এছাড়াও পেনশন ভাতা প্রদানের সময় আড়াই হাজারেরও বেশি গ্রাহকের সেবা প্রদান করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে ব্যাংকে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ড্রয়ার থেকে তাপমাত্রা পরিমাপ যন্ত্র বের করে বলেন, আমাদের তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্রও রয়েছে কিন্তু প্রতিদিন এত গ্রাহকের সেবা প্রদান করা হয়, তাদের সকলের তাপমাত্রা পরিমাপ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাহকদের হাত ধোয়ার জন্য ব্যাংক চত্বরে একটি বেসিং স্থাপন করা হয়েছিলো, অতিরিক্ত চাপের কারণে বেসিংটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকলেই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই কাজ করছেন।

সবচেয়ে বেশি মানুষের হাতে হাতে ঘুরতে থাকে টাকা। আর এই টাকার মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। যদিও ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরোধ করা না গেলেও সকলের সচেতনতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধির দিকে একটু বিশেষ নজর দিলে কিছুটা হলেও করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

Comments (0)
Add Comment