চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়া কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী বিকাশে টাকা দিয়ে প্রতারিত

নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর নিকট শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং যশোর বোর্ডের অফিসার পরিচয়ে উপবৃত্তির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারকচক্র ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার টাকা। প্রশ্ন উঠেছে প্রতারকচক্রের সদস্যদের নিকট শিক্ষার্থীর মোবাইল নাম্বার এবং পারিবারিক পরিচয় সরবরাহ করছে কে? ফলে বড়সলুয়া কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতারিত হবার বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তারের প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়ে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেবার খবরের পর আরও এক শিক্ষার্থীর প্রতারিত হবার খবর সামনে এসেছে একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থী তিতুদহ হুলিয়ামারি গ্রামের তোতা বিশ্বাসের মেয়ে রাজিয়া খাতুনের। উপবৃত্তির ৫০ হাজার টাকা পাবার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষা অফিসার সেজে গত বৃহস্পতিার বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ২৩ হাজার টাকা। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজিয়ার বড়বোন সন্ধ্যা খাতুন বলেন, তখন বেলা ১১টা। শিক্ষা অফিসার পরিচয়ে মোবাইলে ফোন আসে। রাজিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সন্ধ্যা পরিচয় দেয় তার বড় বোন। রাজিয়া তখন কলেজে পিটেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছে। কোনো সমস্যা নেই। রাজিয়া উপবৃত্তির ৫০ হাজার টাকা পেয়েছে। বিকাশ নাম্বার দেন। তবে কাউকে বলা যাবে না। নানা কৌশলে প্রতারকচক্র কথা চালিয়ে যেতে তাকে। সেই সাথে নানা নির্দেশনা দিতে থাকে। যে কথা সেই কাজ তিতুদহ বাজারের কাজল টেলিকমে গিয়ে সাড়ে ২৩ হাজার টাকা প্রতারকচক্রের নাম্বারে বিকাশ করে বসে সন্ধ্যা। বিকাশ করা টাকা পরিশোধ না করায় সন্ধ্যাকে বিকাশের দোকানেই বসিয়ে রাখে দোকানি। অপেক্ষার পালা কখন আসবে রাজিয়ার উপবৃত্তির টাকা। যে টাকা থেকে পরিশোধ করা হবে দোকানির টাকা। সন্ধ্যা পুনরায় প্রতারকচক্রের নাম্বারে ফোন দিলে পুনরায় সমপরিমান টাকা দাবি করে তারা। বিষয়টি দোকানির কাছে খুলে বললে দোকানি সাফ জানিয়ে দেয় এটা প্রতারকচক্রের প্রতারণা। সন্ধ্যা আরও জানায়, তার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় সুদের ওপর টাকা নিয়ে দোকানির বিকাশের টাকা শোধ করতে হয়েছে তাদের। এদিকে কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছে উপবৃত্তির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারকচক্রের ফোন এবং প্রতারিত হয়ে তানিয়া আক্তার এবং রাজিয়া টাকা খুইয়ে অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। রীতিমত বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চেল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে সচেতন মহলের মনে প্রশ্ন জেগেছে, প্রতারকচক্রের সদস্যদের নিকট শিক্ষার্থীদের পরিবারের ফোন নাম্বার এবং পারিবারিক পরিচয় পৌঁছে দিচ্ছে কে? আর প্রতারকচক্র টার্গেট করে বেছে নিচ্ছে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতারকচক্রের সদস্যরা শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে এমন বিশ্বাসযোগ্য করে ফোন দিচ্ছে শুনে মনে হচ্ছে অতিপরিচিত জনের ফোন। যা অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। বরং বিশ্বাস না করলে ৫০ হাজার টাকা হাত ছাড়া হয়ে যাবে। গরিব মানুষ এতগুলো টাকা একসাথে পেলে উপকারই হবে। এত টাকা পেতে কিছু টাকা গেলে ক্ষতি কি? কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। লিখিত নোটিশ করা হয়েছে। সেই সাথে এ ধরনের ফোন এলে নাম্বারটি আমাকে দেবার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শও দেয়া হয়েছে। দর্শনা থানার তদন্ত ওসি সামসুদ্দোহা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জিডি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদিও কাজটি একটু কঠিন কিন্তু অসম্ভব না। প্রতারকচক্র কিভাবে শিক্ষার্থীদের মোবাইল এবং পারিবারিক পরিচয় জানতে পাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চক্রের অনেক সদস্য এলাকাতে অবস্থান করে এসব তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। সময় এবং সুযোগ বুঝে কাজ শুরু করে থাকে। এব্যাপারে আমার পরামর্শ অপিরিচিত ব্যক্তি ফোন নাম্বার চাইলেই দিয়ে দেবেন না। হঠাৎ করে কেউ আপনাকে ফোন করে আপনার পরিবারের বিভিন্ন তথ্য আপনার সামনে উপস্থাপন করে আপনাকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। তিনি যদি আপনাকে পরিচয় না দেন তাহলে আলাচেনা এখানেই বন্ধ রাখুন। ফোনালাপের প্রথমেই নিশ্চিত হন যার সাথে কথা বলছেন তিনি আপনার কতটুকু পরিচিত। ব্যাংকিং নাম্বার বা পিন কোড দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে সকলের একটি কথা মনে রাখা উচিত লোভ বা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনোকিছুর পেছনে ছোটা ঠিক না। এতে করে প্রতারিতই হতে হয় প্রতিমুহূর্তে। তাই নিজে সতর্ক থাকি অপরকে সচেতন করি।

 

Comments (0)
Add Comment