স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় চলতি আউশ মরসুমে আবারও ভয়াবহ সারসংকট দেখা দিয়েছে। জেলার চারটি উপজেলায় ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি সারের সরবরাহ প্রায় বন্ধের পথে। সরকারি ডিলার পয়েন্টে এই প্রয়োজনীয় সারের দেখা মিলছে না, অথচ খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকেরা, যারা এখন বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে সার কিনে চাষাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের অভিযোগ, একটি অসাধু সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে সারের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা জানান, সরকারি ডিলারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ গ্রাম-গঞ্জের খুচরা দোকানে বেশি দামে মিলছে সেই সার। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে জেলা কৃষি বিভাগ এবং প্রশাসন বিসিআইসি ও বিএডিসি অনুমোদিত ডিলারদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করলেও এখনো কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। জেলায় এখন ধান, পাট, পেঁপে ও আগাম শীতকালীন সবজির চাষ চলছে। এই সময় ইউরিয়া, টিএসপি ও ডিএপি সারের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সঠিক সময়ে তা না পাওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক এনামুল হক জানান, ‘ভোটার আইডি দেখিয়ে ডিলারের কাছ থেকে মাত্র ১০-২০ কেজি সার মিলছে। অথচ আমার প্রয়োজন ২০০ কেজি।’ একই গ্রামের কৃষক আকাশ হোসেন বলেন, ‘চাহিদামতো সার না পেয়ে খুচরা দোকানে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।’ বেলগাছি ইউনিয়নের কৃষক মামুন হোসেন বলেন, ‘যে সারের সরকারি মূল্য ১,৩৫০ টাকা, সেটাই এখন ২,৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে চাষাবাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, আমরা দিশেহারা।’ বিসিআইসি অনুমোদিত ডিলার ‘বিশ্বাস ট্রেডার্স’-এর শাওন বিশ্বাস জানান, ‘বর্তমানে নন-ইউরিয়া সারের সরবরাহ কিছুটা কম। কৃষকদের চাহিদা বেশি হওয়ায় সীমিত সরবরাহ ভাগ করে দিতে হচ্ছে।’ অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতা আলমগীর হোসেন ও মিন্টু আলী দাবি করেন, তারা জেলার বাইরে থেকে বেশি দামে সার কিনে এনে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে পরিবহন ও পাইকারি দামের কারণে বিক্রয়মূল্যও বেশি রাখতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘সরকার ভর্তুকিমূল্যে সার দিচ্ছে। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম জানান, ‘জেলায় সারের ঘাটতি নেই বলেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ যদি অভিযোগ করেন, তাহলে গুরুত্বসহকারে তদন্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, তামাক ও মাছ চাষিদের জন্য সারের আলাদা বরাদ্দ থাকতে হবে, যাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। সরকারি বরাদ্দ ও মজুদের ঘাটতি না থাকলেও মাঠপর্যায়ে কৃষকরা প্রয়োজনমতো সার পাচ্ছেন না—যা কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। বিতরণব্যবস্থার দুর্বলতা, তদারকির অভাব ও সিন্ডিকেটের কারসাজির ফলে সৃষ্টি হওয়া এই সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখনই কঠোর নজরদারি, স্বচ্ছ বিতরণব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।