চুয়াডাঙ্গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়লো ৬টি পরিবারের স্বপ্ন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর ইউনিয়নের মাছেরদাইড় গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬টি পরিবারের ১০ টি ঘর আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। দগ্ধ হয়েছে দুইটি গরু, নগদ টাকা সহ ধান, ভুট্টা, চাউল সহ পরিবারের সমস্ত জিনিসপত্র। পরনের কাপড় ছাড়া কোন কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি পাষন্ড আগুন। গতকাল শনিবার দুপুর ১২ টা ২০ মিনিটের দিকে রান্না ঘর থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা।
গ্রামবাসী জানায়, দুপুরে গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে ইনছান আলীর বাড়ির রান্না ঘরে রান্না করতে গিয়ে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে তার বসত ঘরে। এতে তার ঘরে থাকা ভূট্টা বিক্রির নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। তার ঘর থেকে পার্শ্ববর্তী মৃত নুরু ব্যপারীর ছেলে পাখি ভ্যান চালক তাইজেল ইসলামের বাড়িতে আগুন লাগে। পর্যায়ক্রমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তার ছেলে রুবেল হোসেন, প্রতিবেশী বাবুর আলী ছেলে সুমনের বাড়ি, মৃত মঈন উদ্দিনের জানারুল আলম ও মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে জুলহাস হোসেনের বাড়িতে। প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পরিবারের সদস্যরা। পরে খবর দেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের দুইটা ইউনিট। দুই ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা। ততক্ষণে পুড়ে গেছে ওই দিনমজুরগুলোর স্বপ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক তাইজেল ইসলাম জানান, আলমসাধু কেনার জন্য ঘরে গরু বেচে ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নগত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। টাকাগুলো সব পুড়ে গেছে। ঘরে ৪০ মন ধান, চাল, ভূ্ট্টাসহ খাবার জিনিস ছিল পুুড়ে সব শেষ। এখন পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। দিনমজুর জুলহাস হোসেন জানান, গোয়ালে আমার দুটি গরু ছিল, সেই গরু দুটি আগুনে দগ্ধ হয়েছে। একটির অবস্থা গুরুতর।
গ্রামবাসী আরো জানায়, আগুনের লেলিহান শিখায় আগুনের ধারে কাছে কেউ ভিড়তে পারেনি। আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কেউই তাদের ঘর থেকে একটি জিনিসও বের করতে পারেনি। পরনের কাপড় ছাড়া কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। এছাড়া মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতবাড়ি ও সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো‌। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ ও বিলাপ করতে থাকে তারা। তাদের কান্নায় এলাকার বাতাশ ভারি হয়ে ওঠে।
চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার শিমুল রানা জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আমাদের দুইটা ইউনিট। সেখানে প্রায় দুই ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মূলত দিনমজুর ইছানের রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার দ্রুত খাদ্য সহায়তা দান করেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া ইউপি সদস্য সানোয়ার হোসেন ও আশোক আলী নগত অর্থ সহায়তা দেন। সংবাদ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান। তিনি জানান, এ ক্ষতি পূরণ করার মত নয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। আরও সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি তার ফেসবুকে লেখেন, তিলে তিলে গড়া সংসারের সবকিছুই পুড়ে ছাই। পুড়ে গেছে গৃহপালিত পশুও। পুড়েছে স্বপ্ন, পুড়েছে অন্তর। এ ক্ষতি পুরন করার মত নয়। তারপরে ও এ মানুষগুলোকে দাড়াতে হবে, আমাদের সবাই তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়। আরো সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়।

Comments (0)
Add Comment