চুয়াডাঙ্গায় যৌতুক মামলায় পুলিশ কনস্টেবল ও দলিল জালিয়াতি মামলায় তিন নকল নবিসসহ পাঁচজন জেলহাজতে

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় যৌতুক মামলায় এক পুলিশ কনস্টেবল ও দলিল জালের মামলায় তিন নকল নবিসসহ পাঁচজনকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার যৌতুক মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পুলিশ কনস্টেবল সাজু আহমেদকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন দর্শনা আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক দাস।

অপরদিকে, দলিল জাল করা মামলায় আলমডাঙ্গা সাবরেজিস্ট্রী অফিসের তিন নকল নবিসসহ পাঁচজনের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন আলমডাঙ্গা আমলী আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পাপিয়া নাগ।

আদালতসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার দক্ষিণ চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইছাহক আলীর ছেলে সাজু আহমেদ ২০০৬ সালে ভালোবেসে প্রতিবেশী মাসুম কাজীর মেয়ে মনিরাকে বিয়ে করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পান সাজু। চাকরিতে প্রমোশনের কথা বলে শ্বশুরের কাছে দুই লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন তিনি। সেই ধার পরিশোধ না করেই আবারও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে স্ত্রী মনিরাকে তার পিতার বাড়িতে তাড়িয়ে দেন। ২০১৯ সালে সাজু ও তার পিতার নামে আদালতে যৌতুকের মামলা দায়ের করেন মনিরা খাতুন।

পরে কৌশলে আপসের কথা বলে মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেন সাজু। মনিরাকে নিয়ে ঘর করার কথা থাকলেও তাকে ঘরে তুলে নেননি। আপস দূরের কথা, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হওয়া জামালপুর জেলার পঁচাবহলা এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌসীকে গোপনে বিয়ে করেন কনস্টেবল সাজু। প্রথম স্ত্রীকে অন্য বাসায় রেখে আবারও যৌতুকের দাবী করতে থাকেন সাজু। তার পিতাও যৌতুক দাবীতে প্ররোচনা দেন। মনিরাকে আবারও তাড়িয়ে দেয়া হয়। মনিরা আদালতে স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করে গতবছর। আপসের শর্তে জামিন পান সাজু। আপস না করায় গতকাল মামলার ধার্য তারিখে বাদীর দরখাস্তের প্রেক্ষিতে দর্শনা আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিক দাস সাজু আহমেদের জামিন বাতিল করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।

অন্যদিকে, দলিল জালিয়াতি মামলায় আলমডাঙ্গা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নকলকারী হারুন অর রশিদ, সাইফুল ইসলাম, তুলনাকারী আমেনা খাতুন, জালিয়াতিতে সহায়তাকারী আলমডাঙ্গা ছত্রপাড়ার মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে বদর উদ্দিন ও মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে সবেদ আলীকে জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আলমডাঙ্গা আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পাপিয়া নাগ।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শাকদহচর গ্রামের সফিউল ইসলামের স্ত্রী রহিমা খাতুনের দায়েরকৃত মামলাসূত্রে জানা গেছে, তার তিন বোন ছবিরন, অভিরন, আছিয়া ও তাদের স্বামী চুয়াডাঙ্গা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তৎকালীন সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রব ও আলমডাঙ্গা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিস হারুন অর রশিদ, সাইফুল ইসলাম এবং তুলনাকারী আমেনা খাতুনের জোগসাজস ও সহযোগিতায় প্রতারণামূলক বাদীর মা বাহারন নেছার দেয় হেবামূলের আলমডাঙ্গা ডাউকি মৌজার এক একর দুই শতক সম্পত্তি জাল করে নিয়ে ভোগদখল করছে। যার আনুমানিক মূল্য ত্রিশ লক্ষ টাকা। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন জেলা রেজিস্ট্রার। গতকাল বুধবার সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রবসহ ৯ আসামি আদালতের সমন পেয়ে হাজির পূর্বক জামিনের আবেদন করেন।

সাবরেজিস্টারসহ চারজনের জামিন মঞ্জুর এবং নকলনবিস হারুন অর রশিদ, সাইফুল ইসলাম, তুলনাকারী আমেনা খাতুন ও বাদীর দুই বোনের স্বামী যথাক্রমে সবেদ আলী, বদর উদ্দিনের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পাপিয়া নাগ। উভয় মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার ও অ্যাড. জীল্লুর রহমান জালাল।

Comments (0)
Add Comment