ছয়দিনেও খোঁজ মেলেনি চুয়াডাঙ্গা তালতলার স্কুলছাত্র আবু হুরায়রার

স্টাফ রিপোর্টার: নিখোঁজের ৬দিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি চুয়াডাঙ্গা তালতলা গ্রামের স্কুলছাত্র আবু হুরায়রার। শিশু আবু হুরায়রার ভাগ্যে কী জুটেছে তা কেউই অনুমান করতে পারছে না। তবে তাকে জিনে নিয়ে গেছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছিলো তাতে আমল দিচ্ছে না তার পরিবার। এদিকে আইনি সহায়তা দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশন। গতকাল সোমবার বিকেলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তালতলা গ্রামে ওই স্কুলছাত্রের বািড় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন।
জানা গেছে, আবু হুরায়রা (১১) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা মাদরাসাপাড়ার ভুট্টা ব্যবসায়ী কৃষক আবদুল বারেকের একমাত্র ছেলে। সে এবার লটারির মাধ্যমে সুযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) শিশু আবু হুরায়রা প্রতিবেশী প্রাইভেট শিক্ষক রনজু আলীর কাছে অন্যান্য দিনের মতো প্রাইভেট পড়তে যায়। বেলা ৪টায় পড়তে যাওয়ার কথা থাকলেও সে যায় আধাঘণ্টা আগে। এ সময় প্রতিবেশী প্রাইভেট শিক্ষক বাড়িতে ছিলেন না। ছিলেন শিক্ষকের মা। শিক্ষক রনজু আলী চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি জানান, ‘ওইদিন বেলা সাড়ে ৩টায় আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার মা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় আবু হুরায়রা আমাদের বাড়িতে স্কুলব্যাগটি রেখে বাইরে বেরিয়ে যায়। আমি বাড়িতে ফিরে আর পাইনি তাকে।’
একটি সূত্র জানায়, শিশু আবু হুরায়রা নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে ব্যাপকভাবে গুঞ্জন ওঠে তাকে জিনে তুলে নিয়ে গেছে। পয়সাকড়ি দিলে জিন নাকি তাকে ফেরত দিয়ে যাবে। সিরাজগঞ্জ জেলার কথিত জিন চালনাকারী এক কবিরাজের সাথে ধন্দে পড়ে যোগাযোগ রাখেন আবু হুরায়রার বাবা আবদুল বারেক। সর্বশেষ গত শনিবারও ওই কবিরাজের সাথে কথা হয় তার। কবিরাজ ৩০ হাজার টাকার দাবি করেছিলেন। বলেছিলেন, রোববার সকাল ১০টায় আবু হুরায়রাকে ফিরে পেলে ৩০ হাজার টাকা দেবেন। তাতেও রাজি ছিলেন আবদুল বারেক। গতকাল রোববার অধীর আগ্রহে ছিলেন তিনি। কিন্তু না আবু হুরায়রা ফিরে আসেনি। এ ব্যাপারে নিখোঁজ শিশু আবু হুরায়রার বড় বোন বলেন, ‘ওটা একটা চক্র। ওরা জিনের দোহাই দিয়ে পয়সাকড়ি কামায়। ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ রইল।’
আবু হুরায়রার পিতা আবদুল বারেক মাথাভাঙ্গাকে জানান, ‘আবু হুরায়রা একা একাই প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে যায়। ওইদিন সে ব্যাগ নিয়ে পড়তে বের হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে আমার স্ত্রী আবু হুরায়রার কথা জিজ্ঞেস করে। আমি রনজু আলীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি আবু হুরায়রা বইয়ের ব্যাগ রেখেই চলে গেছে। এ কথা শোনার পরই তাকে খুঁজতে শুরু করি। কিন্তু কোথাও তার হদিস পাচ্ছি না।’ আবু হুরায়রার মা নাসিমা বেগম বলেন, ‘এই পাঁচটা দিন আমাদের খাওয়া-দাওয়া নেই। চোখে ঘুম নেই। মোবাইলে কল এলেই আমাদের বুকের ভেতর ধক করে উঠছে। হয়তো কোনো খবর পাবো।’
আবদুল বারেকের ছয় মেয়ের পর অনেক আরাধনা করে জন্ম নেয় একমাত্র ছেলে আবু হুরায়রা। আদরের ছেলে আবু হুরায়রা নিখোঁজের পর থেকেই তাদের নির্ঘুম রাত কাটছে জানিয়েছে আবু হুরায়রার বোনরা জানান, ‘আমাদের তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। বাকি তিন বোন লেখাপড়া করছে। ভাই নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনে আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছি। আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। আমরা অধীর আগ্রহে মুহূর্ত পার করছি; হয়তো কখন ছোট ভাইয়ের সন্ধান পাবো।’
এদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ তালতলা গ্রামের আবু হুরায়রার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন। তারা সংগঠনের পক্ষে আইনি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন একই সাথে শিশু আবু হুরায়রাকে উদ্ধারে পুলিশ সুপারের আশুদৃষ্টি কামনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার, মানবাধিকার কর্মী তথ্য কর্মকর্তা অ্যাড. নওশের আলী, অপারেশন অফিসার অ্যাড জীল্লুর রহমান জালাল, মোটিভেশন অফিসার জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর প্রমুখ।

Comments (0)
Add Comment