জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার বকু-িয়া গ্রামের তালাকপ্রাপ্ত লিলি খাতুনের গর্ভজাত সন্তান মারিয়া আক্তারের জৈবিক পিতা একই গ্রামের বাসিন্দা হাসাদাহ ইউপির সাবেক সদস্য আমির হোসেন (৫৫) ওরফে ঝুলু মেম্বার। ডিএনএ পরীক্ষায় পিতৃত্বের দাবি নিশ্চিত হওয়া গেছে। লিলি খাতুনকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলে সে গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আদালতের নির্দেশে ডিএনএ টেস্টের পর প্রমাণিত হলো মারিয়ার পিতা ঝুলু।
জীবননগর থানায় দাখিলকৃত লিলি খাতুনের এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ৫ বছর পূর্বে পারিবারিক কারণে লিলি খাতুনকে তার স্বামী তালাক প্রদান করেন। তালাকপ্রাপ্ত লিলি তার পিত্রালয় ইউনুছ আলীর বকু-িয়ার বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করেন। ইউনুছ আলী একজন দরিদ্র দিনমজুর। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ঝুলু মেম্বার লিলিদের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন তিনি। অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়ে তালাকপ্রাপ্ত লিলি খাতুনকে (৩৯) জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আমির হোসেন ঝুলু। গত বছরের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় লিলির পিতার বাড়ির শয়নকক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে লিলি অন্ত¡ঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি ঝুলু মেম্বারকে জানালে সে লিলি খাতুনের অনাগত সন্তানের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। এ অবস্থার মধ্যে ১৩ সেপ্টেম্বর লিলি জীবননগর শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। কন্যার নাম রাখা হয় মারিয়া আক্তার। কন্যা সন্তান প্রসবের পরও ঝুলু মেম্বার পিতৃত্বের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করায় লিলি খাতুন গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আমির হোসেন ঝুলুকে একমাত্র আসামি করে জীবননগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি এজাহার দাখিল করেন। এ এজাহার দাখিলের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই ঝুলু মেম্বারকে গ্রেফতার করে চুয়াডাঙ্গার সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করে। আদালতে ঝুলু মেম্বার জবানবন্দী প্রদান করে। জবানবন্দীতে তিনি এ ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। বাদীর আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মারিয়া আক্তারের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে তার ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ প্রদান করে। আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১৪ নভেম্বর লিলি খাতুন, মারিয়া আক্তার ও আমির হোসেন ওরফে ঝুলুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রক্তের নমুনা ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর ডিএনএ টেস্টে সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে আমির হোসেন ঝুলু লিলি খাতুনের গর্ভজাত সন্তান মারিয়া আক্তারের জৈবিক পিতা। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি ডিএনএ পরীক্ষক ঢাকা ফরেনসিক ল্যাবের চিকিৎসক ডা. শুভজয় বৈদ্য স্বাক্ষরিত এ রিপোর্ট প্রদান করা হয়। সোমবার জীবননগর থানাতে এসে পৌঁছাই এ রিপোর্ট। ডিএনএ পরীক্ষার পর মারিয়া তার পিতৃত্বের স্বীকৃতি পেতে চলায় মা লিলি খাতুনসহ তার পরিবার শুকরিয়া প্রকাশ করেছে।