জীবন থাকতে আবাদি জমিতে পাওয়ার প্লান্ট করতে না দেয়ার ঘোষণা    

সোলার পাওয়ারপ্লান্ট স্থাপনের জমি নির্ধারণ করে কেনার কার্যক্রম শুরুতেই ফুঁসে ওঠেছে জীবননগরের কৃষ্ণপুর গ্রামবাসী

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর দাবি গ্রাম সংলগ্ন জমি তিন ফসলী। এ জমিতে আবাদ করেই গ্রামবাসীর রুটিরুজির ব্যবস্থা হয়। এই জমিতে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হলে ভূমিহীন হয়ে পড়বে গ্রামবাসী। ফলে জীবন থাকতে ওই জমিতে সোলার পাওয়ারপ্লান্ট করতে দেয়া হবে না। এ দাবি নিয়ে গ্রামবাসী গতকাল দুপুরে বিক্ষোভসহকারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ করেছে। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের সাথে দেখা করেন। বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, জমি না দিলে নানাভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। গ্রামবাসীর বক্তব্য শুনে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি বলেন, আমি সব সময়ই যৌক্তিক দাবি দাওয়ার সাথে একম। আবাদি জমিতে আবাদ হবে। গ্রামবাসীকে ভূমিহীন করে কোনো স্থাপনা করার সুযোগ নেই। কোথাও কোনো অন্যায় হলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

কৃষ্ণপুর গ্রামবাসী তাদের দাবি আদায়ের লক্ষে কাফনের কাপড় পরে ও বিষের শিশি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বক্তাদের মধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেনসহ কৃষ্ণপুর গ্রামবাসীর পক্ষে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি প্রয়োগ করছে। প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলি। সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। যার মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। এছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান ও অন্যান্য স্থাপনা। মাঠের জমিতে সব ধরনের ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়। কৃষকদের দাবি, সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাকির হুসাইন স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের আলোচনা করলে তা প্রত্যাক্ষান করে গ্রামবাসী। এরপর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সচিব নাজমুল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের স্থান পরিদর্শন শেষে চাষযোগ্য জমিতে স্থাপনা না করতে অনুরোধ করেন। তারপরও তারা থামেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ শেষে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, স্মারকলিপি পর্যালোচনা করে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি বিস্তারিত জানানো হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের তরফে সরেজমিন পরিদর্শনও করা হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, কৃষ্ণপুর গ্রামের মানুষ কৃষিনির্ভর। এই গ্রামের তিন ফসলী জমিকে অনাবাদী দেখিয়ে ১৮০ একর জমিতে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইক্লেস্ট এনার্জি পিটিইলি সোলার পাওয়ার প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। জমির মালিক কৃষকরা জমি বিক্রি করতে না চাইলেও সংঘবদ্ধ একটি চক্র নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। জমির মালিকদের নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। এসব জমি হাত ছাড়া হয়ে গেলে এলাকার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তিন ফসলী জমিতে কোনো স্থাপনা হবে না। ফলে তারা সোলার প্যানেল করতে দেবে না।

অপরদিকে পাওয়ারপ্লান্ট স্থাপনকারীদের তরফে কন্ট্রি ডাইরেক্টর বলেছেন, নিয়ম মেনে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। জমির উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে জমি বিক্রির আহ্বান জানানো হয়েছে। জোর জবরদস্তির কোন সুযোগ নেই। প্রথম দিকে যারা ওই স্থান নির্ধারণে সহযোগিতা করেছেন তাদের কেউ কেউ এখন ভুল বোঝাচ্ছেন। সাংবাদিকসহ সকলকে সরেজমিন পরিদর্শন করে বাস্তব চিত্র দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক’জন জমির মালিক তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ, যেটা করা হচ্ছে সেটা উন্নয়নেরই অংশ।

Comments (0)
Add Comment