ঝিনাইদহে ধর্ষণ মামলার রায় জালিয়াতিতে দু’কারারক্ষী : ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিলো আসামি কবির বিশ্বাসের (৩৭)। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চান তিনি। দাখিলকৃত ওই জামিন আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হয় ট্রাইব্যুনালের রায়। কিন্তু তাতে বদলে দেয়া হয় সাজার মেয়াদ। যাবজ্জীবন সাজার পরিবর্তে সেখানে উল্লেখ করা হয় সাত বছরের দ-ের কথা। আর এ কাজে যুক্ত হন দুই কারারক্ষী ও মামলার তদবিরকারক। রায় জাল করে জামিন চাওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে তা হাইকোর্টের নজরে আনেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত পাঁচজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল রোববার এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে তদন্তে কোনো আইনজীবীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত বলেন, যাবজ্জীবন সাজার রায় পরিবর্তন করে এভাবে জামিন চাওয়া বিস্ময়কর। হাইকোর্ট যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা হলেন কবির বিশ্বাস, ঝিনাইদহ কারাগারের দুই কারারক্ষী বিশ্বজিত ওরফে বাবু ও খাইরুল, মামলার তদবিরকারক কাদের ও এফিডেভিটকারী চান্দ আলী বিশ্বাস।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর কবির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালের ৮ জুলাই কবিরকে যাবজ্জীবন দ- দেয়। এছাড়া দুই লাখ টাকা জরিমানাও করেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে কারাগার থেকে আপিল করেন আসামি। চান জামিনও। কিন্তু আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় জাল নথি সৃজন করে হাইকোর্টে আরেকটি আপিল করেন ওই আসামি। যেখানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মামলার নথি ও ট্রাইব্যুনালের রায় পাল্টে দেয়া হয়। জাল নথিতে দেখা যায়, মামলাটিকে গণধর্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামি কবির বিশ্বাসের বয়স উল্লেখ করা হয় ৬৫ বছর। বয়স বিবেচনায় যাবজ্জীবন দ-ের পরিবর্তে তাকে সাত বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও তিন আসামিকে যাবজ্জীবন দ-ের কথাও জালিয়াতির রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি রায়ের দিন ও বিচারকের নামও পাল্টে ফেলা হয়েছে। হাইকোর্ট গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। তবে আসামির সাজা কেন বাড়ানো হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণের পরও আসামিকে কেন সাজা কম দেয়া হয়েছে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে ট্রাইব্যুনালের বিচারককে নির্দেশ দেন।
জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সৃজন করা নথির ভিত্তিতে হাইকোর্টের জামিন চাওয়ার বিষয়টি উদঘাটন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। তিনি বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনলে পূর্বের আদেশ রিকল করা হয়। রোববার শুনানিতে আসামি কবিরের আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, দুই কারারক্ষী বিশ্বজিত ও খায়রুলের কাছ থেকে মামলার নথি এনে আমার ক্লার্ককে জামিনের জন্য দিয়ে গেছেন তদবিরকারক কাদের। এখানে এতো বড় জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় দুই কারারক্ষীর জড়িত থাকার বিষয়টি আসামির আইনজীবী আদালতকে বলেছেন। এরপরই হাইকোর্ট ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন।

Comments (0)
Add Comment