ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ পৌরসভার বিভিন্ন পাড়ামহল্লায় দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতায় নাগরিকরা ক্ষোভে ফুঁসছে। জনজীবনে নেমে এসছে স্থবিরতা। মাসের পর মাস রাস্তায় ও পাড়ার মধ্যে পানি জমে থাকায় স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী ও চাকরীজীবীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। মারাত্মক জলাবদ্ধতায় জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। সরেজমিন দেখা গেছে, পৌরসভার ২৯টি পাড়ামহল্লার বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনগুলো অকেজো থাকায় পানি প্রবাহ নেই। ফলে মাসের পর মাস পানিতে ডুবে থাকছে রাস্তাঘাট। জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিন চলমান থাকলেও ঝিনাইদহ পৌরসভার দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ঝিনাইদহ পৌরসভায় স্থায়ী একটি মাস্টার ড্রেন নির্মাণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যুগে যুগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হলেও প্রকৌশল বিভাগের সহায়তায় তারা অপরিকল্পিত ড্রেন তৈরী করে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন। ফলে পানি ড্রেনেজ হওয়ার পরিবর্তে দেশি বিদেশী কয়েক’শ কোটি টাকা ড্রেনআউট হয়ে গেছে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ড থেকে পাগলাকানাই মোড় পর্যন্ত সড়ক বিভাগ একটি ড্রেন তৈরী করলেও তাতে সংযোগ না থানায় কোন পানি প্রবাহ নেই। পাগলাকানাই থেকে ভাসানী সড়ক পর্যন্ত, জিয়া সড়ক, উপ শহরপাড়া, মুন্সি মার্কেট থেকে শেরেবাংলা সড়কের ড্রেনগুলোতে পানি প্রবাহ নেই। ওই সব পাড়ার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। অন্যদিকে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃহত্তর ব্যাপারীপাড়া, গোরস্থান সড়ক, আদর্শপাড়া, মডার্ণ মোড়, চাকলাপাড়া, কালিকাপুর, কাঠালবাগান, সায়াদাতিয়া সড়ক, কাঞ্চননগর, থানাপাড়া, কলাবাগান, মদন মোহনপাড়া, হামদহ মোল্লাপাড়া, গ্রীড স্টেশন পাড়া, ভুটিয়ারগাতি, পবহাটী, কোরাপাড়া ব্যাকা ব্রীজ, কলাবাগান, বাজারপাড়া, নতুন হাটখোলা, বাজারপাড়া ও কোর্টপাড়া থেকে পানি বের হতে পারছে না। এ সব পাড়ায় বসবাসরত মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে।
উপ-শহরপাড়ার শিক্ষক নাছিমা বেগম জানান, দুই মাসের বেশি সময় ধরে তার বাড়ির সামনে পানি জমে আছে। তার সন্তানরা এখন অন্যত্র বাসাভাড়া নিয়ে চলে যেতে চাচ্ছে। একই পাড়ার বৃষ্টি খাতুন জানান, জলাবদ্ধতার কারণে সাপ, ব্যাঙ, কেঁচোসহ পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ঘরে বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে।
পাগলাকানাই সায়াদাতিয়া সড়কের বাসিন্দ জহুরুল ইসলাম মামুন জানান, তাদের গোটা পাড়া পানির নিচে। জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ির মধ্যেও পানি প্রবেশ করেছে। ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বসবাস করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ চেম্বারের সাবেক সভাপতি মীর নাসির উদ্দীন জানান, পৌর এলাকার ড্রেনগুলো অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে। শহরের পাশে নদী থাকতেও একটা মাষ্টার ড্রেন তৈরি করে নদীতে দেয়া যায়নি। এটা বড়ই দুর্ভাগ্য। পৌর এলাকার কৃষক মহিউদ্দীন জানান, শহরের ভিতর ও বাইরে দিয়ে প্রবাহিত ছোট ছোট নালা ও খালগুলো ভরাট হওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। ফলে তারা এবার জমিতে ধান রোপন করলেও তা প্রায় এক মাস ধরে পানির নিচে রয়েছে।তিনি বলেন, শহরের পশ্চিম এলাকার পানি কোরাপাড়া-কাঞ্চনপুর হয়ে হামদহ এলকা দিয়ে প্রবাহিত হতো। কিন্তু এখন সেই খালের মধ্যে বড় বড় ভবন তৈরী হয়েছে।
ব্যবসায়ী সুলতান শেখ অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ শহরের নদী, খাল, বিল ও নালা দখলের প্রধান কারিগর হচ্ছে ঝিনাইদহ পৌরসভার নকশা বিভাগ। এই বিভাগের অসাধু কর্মচারীরা লাখ লাখ টাকা খেয়ে সহজেই নদী, খাল, বিল ও নালার মধ্যে বাড়ি তৈরীর অনুমোদন দিয়ে থাকে। ফলে ১২ বছরের মধ্যেই খালগুলো মানচিত্র থেকে উধাও হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন বলেন, ইতিমধ্যে নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে পাড়ায় পাড়ায় আমরা পানি নিষ্কাশনের কাজ করছি। তাছাড়া পরিকল্পিত ভাবে করেয়কটি ড্রেন নির্মানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি প্রকল্পের টাকা পাওয়া গেছে, টেন্ডারও হয়েছে। তিনি বলেন, দুইটি ড্রেন নির্মিত হলে অনেকাংশে জলাবদ্ধতা কমে যাবে।