ড্রাগন চাষে চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামের আশরাফুলের ভাগ্য বদল : অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা অর্জন

নজরুল ইসলাম : বাড়ির সামনের চিত্রানদীর সাঁকো পার হলেই চারদিকে সবুজের সমারোহ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন গাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। স্বপ্নীল পরিপাটি এ বাগানটি গড়ে তুলেছেন চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামের পল্লী বিদ্যুত বিভাগের ইলেকট্রিশিয়ান আশরাফুল প্রধান। বিদেশি ফলের চাষ করে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। ফল এবং চারা বিক্রি করে নিজে লাভবান হবার পাশাপাশি কৃষি বাগান করতে উৎসাহ যোগাচ্ছেন যুবসমাজকে। চাকরির  পেছনে না ছুটে ফলজ বাগান করলে নিজে স্বাবলম্বী করার পরামর্শ তার। ফলজ বাগান করে অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা অর্জনের পথ দেখেছেন এবং দেখাচ্ছেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের আমতলাপাড়ার মৃত ইসমাইল প্রধানের ছেলে দর্শনা পল্লীবিদ্যুত বিভাগের ইলেকট্রিশিয়ান আশরাফুল প্রধান ৩৩ শতাংশ জমিতে ২৮১টি ড্রাগনের চারা লাগিয়ে যাত্রা শুরু করেন।  দেড় বছরের ব্যবধানে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ফল ও ৫০ হাজার টাকার ড্রাগন চারা বিক্রি করছেন। বিভিন্ন জায়গায় ফলপ্রেমী ও সৌখিন ড্রাগন চাষিদের জন্য তিনি ফল ও চারা সরবরাহ করছেন। আর এই ড্রাগন চাষেই নিজে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি যুবসমাজের ড্রাগন চাষ করার পরামর্শর মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখছেন আশরাফুল। আশরাফুল বলেন, এসএসসি পাস করার পর সাংসারিক কারণে আর লেখাপড়া করা হয়নি। কম শিক্ষিত বলে সরকারি চাকরি হয়নি। জীবন-জীবিকার তাগিদে বেশ কয়েক বছর পল্লী বিদ্যুত বিভাগের ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করি। হাড়ভাঙা খাটুনি অনুযায়ী পারিশ্রমিক কম এবং নানা আলোচনা সমালোচনা থাকায় সেখানে নিজেকে খুব বেশি আবদ্ধ রাখতে পারেনি। পরিকল্পনা করি পরের অধীনে আর কতদিন। ইলেকট্রিশিয়ানের পাশাপাশি বাপ-দাদার পুরনো পেশা কৃষি কাজে মনোযোগ দিই। দেড় বছর আগে কয়েকজন ড্রাগনচাষি এবং নার্সারি মালিকের সঙ্গে পরামর্শ করে ড্রাগন চাষ শুরু করি।

তিনি আরো জানান, একবিঘা জমিতে ২৮১টি গাছ লাগিয়েছি। এক একটি ড্রাগন ফল ৪ থেকে ৫শ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়। বাগান থেকে প্রতি কেজি ড্রাগন ৩২০ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করে থাকি। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ তার বাগান থেকে ড্রাগন চারা কিনে নিয়ে যায়। এবছর ফল ও চারা বিক্রি করে দেড় লাখ টাকার বেশি আয় করেছেন। আগামী বছর এরচেয়ে অনেক বেশি হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা বাগান করার সময়ই যা খরচ। পরে আর খুববেশি খরচ নেই। কৃষি বিভাগ থেকে জানতে পেরেছি একবার ড্রাগনের বাগান করলে তা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে ফল দেবে। আর সার বলতে জৈব সারই ব্যবহার করে থাকি।

বছরে কয়বার ফল পাওয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল বলেন, শীত মওসুমে প্রায় চার মাস ছাড়া বছরের বাকি ৮ মাস ড্রাগনের ফলন অব্যাহত থাকে। ১৫ দিন পরপর ফল তোলা যায়। সফল এ ড্রাগন চাষি জানান, কয়েক বছর আগেই দেশে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। তা দেখাদেখি ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পরিপূর্ণ ভাবে ফলধরা শুরু করলে এখান থেকে গড়ে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজাটা টাকা আয় করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, আমার দেখাদেখি এলাকার শিক্ষিত যুবকরা ড্রাগনের বাগান করেছে। চাকরির পিছে না দৌড়ে অনেকে আমার কাছে আসছে বাগান তৈরির পরামর্শের জন্য।

কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। আশরাফুলের বাগানে ১৪ মাসের মাথায় ফল আসে। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারেন।

Comments (0)
Add Comment