ত্রাণ না পেয়ে খেদোক্তি ‘নাম লিখেও দিলো না কিছুই’

চুয়াডাঙ্গায় করোনা কেড়ে নিয়েছে দিনমজুরদের কাজ

আনোয়ার হোসেন: করোনার সর্বস্তরকেই স্থবির করে রেখেছে। দিনমজুরেরাও হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ভোরে যারা শ্রম বিকোনের জন্য মুনিবের ডাকের প্রতিক্ষায় প্রহর গোনেন, তাদের প্রায় সকলকেই ফিরতে হচ্ছে কাজ না পেয়ে শূন্যহাতে। কবে যাবে করোনা, কবে জুটবে কাজ তা কেউ জানে না। অথচ দিনমজুরদের অধিকাংশেরই ঘাড়ে রয়েছে ক্ষুদ্রঋণের বোঝা। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশ যখন সাধারণ ছুটির আওতায় ছিলো তখন ত্রাণ বিতরণ করা হলেও শহীদ হাসান চত্বরে কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিকেরা তার কিছুই পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের নাম ধাম লিখে নিয়ে গেলো, ভোটার আইডি কার্ডও নিয়ে গেলো অথচ চেয়ারম্যান মেম্বাররা কিছুই দিলো না।
বিশ্বজুড়েই নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। দেশের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। মার্চের শেষের দিকে দেশজুড়ে লকডাউনের পর পক্ষকাল হয়ে গেলো সর্বক্ষেত্রেই শর্তসাপেক্ষে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। যদিও কিছু এলাকা অধিক ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে। এসব এলাকার দিনমজুরদের দূরদশা দেখভালের প্রস্তুতি চললেও সর্বস্তরে ছড়িয়ে থাকা দিনমজুরদের দুর্দিন কাটছে না। করোনা ভাইরাসের কারণে জনপাট নিয়ে কাজ করানোর কথা ভাবছেনই না কেউ। নির্মাণ কাজ শূন্যের কোঠায়। রাজমিস্ত্রি ও এ মিস্ত্রির জোগালেদের অধিকাংশেরই দিন কাটছে কাজ ছাড়া। আর যারা দিনমজুরি করেই পরিবারের সদস্যদের দু বেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করেন তাদের দুর্দশার অন্ত নেই। গত দুদিন সকালে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে কাজের অপেক্ষায় বসে থাকা বেশকিছু দিনমজুরের সাথে কথা হয়। জানা যায় এদের প্রায় সকলের কষ্টের কথা। এদের মধ্যে হাড়োকান্দির বেল্টু, মরজেম হোসেন, ইদ্রিস আলী, অভিন্নভাষায় বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে কাজ জুটছে না। দিনমজুরি করে পাওয়া টাকায় সংসার চলে। আগে দু একদিন কাজ না হলেও পাড়ার দোকানদার চাল আটা বাকি দিতো, এখন তাও দিচ্ছে না। দেবেই কেনো? কতোদিনই বা ওরা বাকী দেবে? এদের মধ্যে বেল্টু বললেন, একটি এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে গরু কিনেছিলাম। ঋণের কিস্তি দিতে পারছি না। হামিদুল ইসলাম বললেন, দেশে দিনমজুরি করে সংসার চলে না, তাই বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ করলাম। ঋণ করে নেয়া টাকা আদম ব্যপারীদের হাতে তুলে দিলাম। যখন শুনছিলাম ফ্লাইট হবে হবে, তখনই এলো করোনা। কপাল খারাপ। জানিনা বিদেশে যাওয়া হবে কিনা। ঋণের টাকা পরিশোধ করবো কীভাবে আল্লাহই জানেন। একে তো ঋণের চিন্তা, তা পর সংসারে চাল জুটছে না।
সরকার যে এতো এতো ত্রাণ দিলো। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার বিতরণ করা হলো, এসবের কিছু পাননি? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কাথুলির আবজেল মল্লিক, হাড়োকান্দির জয়নাল, গাড়াবাড়িয়ার সুমন, দিগড়ির সাইদুর রহমান, গাড়াবাড়িয়ার হামিদ, কেদারগঞ্জের আজিজুল হক, ভিমরুল্লার মতিয়ার রহমান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কারা কাদের ত্রাণ দিলো তা তো চোখেই দেখলাম না। শুনলাম, সরকার গরিব মানুষদের মোবাইলফোনে বিকাশ করে আড়াই হাজার টাকা দিচ্ছে। আমরা দিনমজুরি করি। দিন আনি দিন খাই। এরপরও কি মেম্বার চেয়ারম্যানদের চোখে আমরা গরীব হলাম না? এ অভিযোগকারীদের মধ্যে কয়েকজন বললেন, ঈদের আগে অনেক কিছু দেবে বলে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে গেলো। নাম লিখে নিয়ে গেলো। আশায় বুক বেধে বসেছিলাম। কিছুই পেলাম না। এসব কষ্টের কথা বলবো কার কাছে!

Comments (0)
Add Comment