স্টাফ রিপোর্টার: গতকাল সোমবার ভোর থেকে আবারও থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ আবার পুরোদিনের কাজই করতে পারেননি। বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালকসহ খেটে খাওয়া মানুষরা। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। গতকাল দেশে সবচেয়ে বৃষ্টি হয়েছে বান্দরবানে ১৬০ মিলিমিটার। চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৯ মিলিমিটার। ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬ মিলিমিটার। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ছিলো ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থ্যাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তফাৎ ছিলো মাত্র ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, গত রোববার পঞ্চগড়, রংপুর ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ এবং রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। মঙ্গলবার লঘুচাপের প্রভাবে দেশে বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে। মরসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার পাশাপাশি সাগরে লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে রোবাবর সকাল থেকেই কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে এটি সারাদেশে বিস্তৃত হয়ে পুরো সপ্তাহেই থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে’ মরসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এর পাশাপাশি সাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে সারাদেশের ওপর দিয়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও উপকূলের চার সমুদ্রবন্দরের জন্য ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোর জন্য ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, সোমবার দুপুর থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে জীবননগরে চরম জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বৃষ্টি পাতের সাথে ঝোড়ো বাতাসে নষ্ট হয়েছে জমির ফসল। প্রবল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এতে অনেক মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম মরসুমি বায়ু সক্রিয়তার কারণে মাঝারি ও হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। মাঝে দুইদিন বিরতির পর সোমবার দুপুর থেকে আবারও মুশলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টিপাতের কারণে জীবননগর উপজেলার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের বসে থেকে দিন পার করতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে মানুষ অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজি চালকরাও বেকার সময় কাটাচ্ছেন। বৃষ্টিপাতের কারণে নিচু স্থানের রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাস্তার ওপর সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সাধারণ পথচারী ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। রাস্তার ওপর পানি জমে থাকার কারনে রাস্তার ইট খোয়া উঠে গেছে। রাস্তা ডুবে যাওয়ার কারনে রোগীদের হাসপাতালে নিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে স্বজনরা। জীবননগর পৌরসভার অনেক রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে বৃষ্টি পাতের কারণে উপজেলার নিচু জমির ফসলগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির সাথে ঝড় হওয়ার কারণে ভেঙে পড়েছে কলাগাছ ও পেঁপে গাছ। ধানের বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে ধান, পাট, কলা, পেঁপে, কচু, মরিচ চাষিদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেকের পুকুর ভেসে গেছে। চাষিরা বলছেন, আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই বৃষ্টিপাত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বৃষ্টিপাত হতে থাকলে সব ফসলেরই ক্ষতি হবে।
উপজেলার উথলী গ্রামের কৃষক ছাত্তার আলী বলেন, আষাঢ় মাসে এমন বৃষ্টিপাত আমি অনেক বছর দেখিনি। বিলের মাঠে দুই বিঘা জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছিলাম। গত কয়েক বছর ধরে ধান ভালো হয়েছে। পানিতে ডুবে না। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে ধানগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সজীব হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষেতের জমির ফসল সব ডুবে গেছে। জমির মহাজনের টাকা ও সারের দোকানের বাকি কিভাবে পরিশোধ করবো।
এদিকে, জীবননগরে টানা বর্ষা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে শ্রমজীবী, ছিন্নমূল এবং অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-আমীন। এসব অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার (চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, মসলা) পৌছিয়ে দিচ্ছেন। কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-আমীন।
পেয়ারাতলা গ্রামের ভ্যন চালক মো. রায়হান উদ্দিন বলেন, ইউএনও স্যার আজকে দুপুরে বাড়িতে এসে বিনামূল্যে খাদ্য দিয়ে গেছেন। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে বাড়িতে একেবারে বেকার বসে আছি। ৬ সদস্যের সংসারে খাবারের জন্য খুব কষ্টে ছিলাম। আজকে ইউএনও স্যারের কাছ থেকে খাবার পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। খাদ্য সামগ্রী সহায়তা পাওয়া রহিমা খাতুন বলেন, ইউএনও স্যার বাড়িতে এসে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছে। খুবই ভালো লাগছে। আল্লাহ স্যারকে ভালো রাখুক। ইউএনও’র এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে দাবি করেছেন লক্ষীপুর গ্রামের আমীর হোসেন নামের এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, ইউএনও স্যারের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা চাই, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-আমীন বলেন, বিরামহীন বর্ষায় বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের কথা চিন্তা করে আমি নিজে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। যেখানেই খবর পাচ্ছি অসহায় কর্মহীন মানুষ খাদ্যের জন্য কষ্ট আছে, তখনই ছুটে গেছি শুকনো খাবার নিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কথা চিন্তা করেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে এ কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। যে কয়দিন বর্ষা থাকবে আমাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।