দর্শনার জয়নগর চেকপোস্টের কার্যক্রম বন্ধ সাড়ে ৯ মাস

কর্মহীন ৫ শতাধিক মানুষ পাল্টেছে পেশা : রাজস্ব বঞ্চিত প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা

দর্শনা অফিস: কাক ডাকা ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যেখানে থাকতো অসংখ্য মানুষের সমাগম। দিনভর যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষের আনা-গোনায় মুখরিত থাকতো, সেই স্থানটি আজ জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ২৯১ দিন বন্ধ রয়েছে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম। যে কারণে খেটে খাওয়া ৫ শতাধিক মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি তা রয়েছে অনিশ্চিত। এ পর্যন্ত সরকার প্রায় আড়াইশ কোটি রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে জয়নগর চেকপোস্ট বন্ধের কারণে। করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্তের কয়েকদিনের মাথায় বন্ধ করা হয় দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম। গত বছরের ১২ মার্চ দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত বন্ধ হয়। যেহেতু অনেক পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি ভারতে আটকে পড়েন, সেহেতু সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দেয়া হয়। ২৬ মার্চ থেকে গোটা দেশ লকডাউনের আওতায় এনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সে থেকেই জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ চেকপোস্টে যাত্রীদের মালামাল বহনকারী (কুলি) ভ্যান চালক, ইজিবাইক, সিএনজিসহ সকল প্রকার যানবাহন চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়েন কর্মহীন। জয়নগরের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দিনমজুরের কাছ থেকে শোনা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরেই চেকপোস্টে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তারা। লম্বা সময় ধরে চেকপোস্টের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে প্রায় ৫শ’ জন কাটিয়েছেন বহুদিন। ৫শ’ জনের কর্মের উপর নির্ভরশীল প্রায় ২ হাজার মানুষ। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বিকল্প পেশা হিসেবে একেকজন একেক পেশা বেছে নিয়ে করছেন জীবিকা নির্বাহ। জয়নগর চেকপোস্টে রয়েছে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিজিবি ক্যাম্প, আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, স্বাস্থ্য বিভাগ, সংঘনিরোধ ভবনসহ অর্ধশত বিভিন্ন দোকানপাট। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথা নিয়মে বেতন পেলেও খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে কর্মহীন হয়ে পড়তে হয়। দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে প্রতিদিন গড়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ২ হাজার। এদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জনকে ভ্রমণ কর কাটতে হতো। বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের প্রত্যেক যাত্রীকে ভ্রমণ কর হিসেবে ৫শ’ টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দিতে হয়ে থাকে। ভারতীয়রাও বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফেরার সময় ৫শ’ টাকা ভ্রমন কর দিতে হয়। ফলে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার যাত্রীকে ভ্রমন কর দিতে হতো সরকারকে। তাছাড়া ভারত থেকে আনা মালামালের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও ছিলো নেহাতই কম নয়। সে হিসেব মতো আজ ১৭ জানুয়ারি ২৯১ দিনে আড়াইশ’ কোটিরও বেশি টাকা ভ্রমন ফি ও যাত্রীদের বৈধভাবে আনা ভারতীয় মালামালের রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ভারতের অবস্থা খুব ভালো নয়। চেকপোস্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হলে এ প্রাদুর্ভাব দেশে বেশি ছড়াতে পারে এ আশংকায় চেকপোস্ট খোলার সম্ভাবনা নেই। তবে কবে নাগাদ চেকপোস্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হবে তা জানা যায়নি।

Comments (0)
Add Comment