দীর্ঘদিনের দাবি ও স্বপ্ন পূরণ : আলমডাঙ্গায় যাত্রাবিরতির অনুমোদন পেলো বেনাপোল এক্সপ্রেস

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: দীর্ঘদিনের দাবি ও স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আলমডাঙ্গাবাসীর। অবশেষে আন্তঃনগর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতির অনুমোদন পেলো  আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রশাসন-৬ শাখা’ থেকে ২৯ মে ‘২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়া হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী ৭৯৫/৭৯৬ নম্বর আন্তঃনগর বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখন থেকে আলমডাঙ্গা স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। আলমডাঙ্গাবাসী মনে করছেন এটা তাদের দীর্ঘদিনের সম্মিলিত দাবি ও আন্দোলনের ফসল। এ যাত্রাবিরতির অনুমোদন কোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের একক প্রচেষ্টায় নয় এটি আলমডাঙ্গার সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির ফসল। গ্রামীণ কৃষক থেকে শুরু করে শহরের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, পেশাজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ পর্যন্ত সকলেই এ দাবিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। স্থানীয়রা বারবার রেল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন, স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। কিছুদিন আগেও কয়েকটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে, হয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ। এ দাবিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে এক ধরনের সামাজিক ঐক্য তৈরি হয়। স্থানীয় সচেতন মহল একে অনেকেই জনতার আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করছেন। একাধিকবার বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিষয়টি আলোচিত হয়।

আলমডাঙ্গাবাসীর এ আন্দোলনের অন্যতম সহায়ক হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই দাবির পক্ষে কাজ করেছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, তথ্য উপস্থাপন, জনগণের দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিষয়টি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। তার এই নিরলস প্রচেষ্টার জন্য এলাকাবাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। সাথে সাথে আলমডাঙ্গার একাধিক সন্তান, যারা উর্দ্ধতন সরকারি কর্মকর্তা,  তাদেরও আন্তরিক  চেষ্টার ফসল এ সাফল্য। এদিকে, এ সুখবরে আনন্দে মাতোয়ারা আলমডাঙ্গাবাসী। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই আলমডাঙ্গায় আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে খুশি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, “দীর্ঘদিন পর মনে হচ্ছে আলমডাঙ্গা কিছু পেতে চলেছে।” আলমডাঙ্গা একটি জনবহুল এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এখানকার বহু মানুষ ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াত করেন পড়াশোনা, চিকিৎসা, চাকরি ও ব্যবসার কারণে। বেনাপোল এক্সপ্রেসে যাত্রাবিরতির ফলে ঢাকাগামী যাত্রীদের যাত্রা যেমন সহজ হবে, তেমনি খরচ ও সময় উভয় ক্ষেত্রেই সুবিধা মিলবে। পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছেন অনেকে। আলমডাঙ্গার এই প্রাপ্তিকে অনেকে রেলসেবার উন্নয়নের সূচনামাত্র হিসেবে দেখছেন। রেলস্টেশনে যাত্রীসেবা, টিকিটিং ব্যবস্থা, নিরাপত্তা এবং প্ল্যাটফর্ম উন্নয়নে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই অর্জনের পথ দেখিয়েছে আলমডাঙ্গাবাসীর ঐক্য। জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান ও আলমডাঙ্গার সন্তান যারা সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐতিহ্যবাহী আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন ও রেলওয়ের প্রভুত উন্নয়ন প্রত্যাশা করেন আলমডাঙ্গাবাসী।