পরকীয়ার কারণেই খুন হন সমাজসেবার মাঠকর্মী ফারুক

১৬৪ ধারায় আসামি দাউদের আদালতে জবানবন্দি : মেহেরপুর পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

মেহেরপুর অফিস: পরকীয়ার কারণে খুন হয়েছেন মেহেরপুর শহর সমাজসেবা অফিসের মাঠকর্মী ফারুক আহমেদ। হত্যা মামলার মূল আসামি ফারুক হোসেন ওরফে বড় ফারুক আটকের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এ তথ্য দিয়েছে। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ দাউদ হোসেন নামের আরও এক খুনিকে আটক করেছে। দাউদ হোসেন মেহেরপুর শহরের তাঁতিপাড়ার কাসেদ আলীর ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দাউদ হোসেন খুনের সাথে জড়িত ছিলো মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি বলেন, ঘাতক ফারুক হোসেন মেহেরপুর শহরের তাঁতিপাড়ার আব্দুল লতিফ বিশ^াসের ছেলে। মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি দল রোববার মধ্যরাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে ফারুক হোসেনকে আটক করে। সে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেছে। গত সোমবার বিকেলে তাকে মেহেরপুর আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
তিনি আরও বলেন, শহর সমাজসেবার মাঠকর্মী ফারুক আহমেদের সাথে ঘাতক ফারুক হোসেনের বন্ধুত্ব ছিলো। মালয়েশিয়া প্রবাসে থাকাকালে ফারুক হোসেন সমাজ সেবার মাঠকর্মী ফারুক আহমেদের মাধ্যমে নিজ স্ত্রী বিলকিস খাতুনের কাছে টাকা পাঠাতো। ওই সময় থেকে ফারুক আহমেদ ও বিলকিস খাতুনের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়। দুই বছর পরে ফারুক হোসেন বিদেশ থেকে দেশে ফিরে স্ত্রীর পরকীয়ার কথা জানতে পারে। এ নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দন্দ্ব চলতে থাকে। এরই মধ্যে ফারুক হোসেন সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্ত প্রহরী) এর চাকরি নিয়ে ঢাকাতে যান। লকডউনের কারণে প্রায় ৮ মাস আগে ফারুক হোসেন মেহেরপুরে ফিরে আসেন। সমাজসেবার মাঠকর্মী ফারুক আহমেদের সাথে বিলকিস খাতুনের পরকীয়ার বিষয়টি আরও পরিষ্কার হলে স্বামী-স্ত্রীর দন্দ্বে স্ত্রী বিলকিস খাতুন মেহেরপুর ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। এরপর সমাজসেবার মাঠকর্মী ফারুক আহমেদ ও ফারুক হোসেনর মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এরই জের ধরে ফারুক আহমেদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ফারুক হোসেন। সে মতে ফারুক হোসেন সহযোগী দাউদ হোসেনকে সাথে নিয়ে ফারুক আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করে ও পুনরায় ঢাকাতে ফিরে যান।
এদিকে হত্যা মামলার মূল আসামি ফারুক হোসেনের স্বীকারোক্তিতে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ সোমবার রাতে দাউদ হোসেনকে তার নিজ এলাকা থেকে আটক করে এবং তার দেয়া তথ্যে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। গত সোমবার বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় দাউদ হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। দাউদ হোসেন শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি। দীর্ঘদিন জেলখাটার পরে সে বাড়ি ফিরে আসে এবং এ দিনের কিলিং মিশনে অংশ গ্রহণ করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম, মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় সদর থানার সামনে চা পান করে বাসায় ফেরার পথে শহরের থানাপাড়ায় (উত্তর) নিজ বাড়ির সামনে হামলার শিকার হন সমাজসেবার মাঠকর্মী ফারুক আহমেদ। ধারালো অস্ত্রের কোপে তাকে রক্তাক্ত জখম করা হয়। মুহূর্ষু অবস্থায় তাকে ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন নিহতের স্ত্রী নাজমা খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মেহেরপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 

Comments (0)
Add Comment