স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মজিবুল হক মালিক মজু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মজিবুল হক মালিক মজু (মজু মিয়া) ছিলেন চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। মৃত্যুকালে মরহুমের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। মজিবুল হক মালিক মজু মরহুম এহসানুল হক মালিকের জ্যেষ্ঠ পুত্র। রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন সক্রিয় থেকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে তিনি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গা রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজু’র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। শোকবার্তায় তিনি বলেন, জনপ্রিয় বিএনপি নেতা মজিবুল হক মালিক মজু আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমএ-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আহসান আলী, চুয়াডাঙ্গা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এলখাছ উদ্দীন সুজন, আমরা মানুষের জন্য সংগঠনের সভাপতি শহিদুল হক বিশ্বাসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। জানাজা শেষে সন্ধ্যায় চিরনিদ্রায় শায়িত হন বাবা মরহুম এহছানুল হক মল্লিকের কবরের পাশে।
পারিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার সকালে হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল কাদের তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মজিবুল হক মালিক মজু নামের এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।
মজিবুল হক মালিক মজু ছিলেন অত্যন্ত সাদালপি, মিষ্টভাষী, ন্যায় পরায়ন ও খোলা মনের একজন মানুষ। দলমত নির্বিশেষে তিনি সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে ছিলেন জড়িত। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ-সভাপতি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির সাবেক আহ্বায়ক, চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক আহ্বায়ক, চুয়াডাঙ্গা শিশু-কিশোর সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্য সেবায় চুয়াডাঙ্গার সাধারণ জনগণের পাশে ছিলেন পরম বন্ধুরূপে। চুয়াডাঙ্গার গরিব-দুঃখী মানুষের সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রিক যেকোনো বিষয়ে তিনি ছিলেন দিকনির্দেশক, ভরসার জায়গা। দল মত নির্বিশেষে যিনি অনেকেরই ছিলেন আস্থাভাজন। নির্দ্বিধায় মানুষের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। জীবদ্দশায় সেই পরোপকারী মানুষটি যে হাসপাতালে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য এ বারান্দা থেকে সে বারান্দা, ডাক্তারদের এক চেম্বার থেকে অন্য চেম্বারে ছুটে বেড়াতেন সেই মানুষটি আজ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেবার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
মরহুমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে কিছুটা শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নেয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পরপরই চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বলেন বেশ কিছুক্ষণ আগেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ তিনি পথের মধ্যেই মারা গেছেন। পরিবারের লোকজন মরহুম মজিবুল হক মালিক মজু মিয়ার মরদেহ ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়ার বাসায় নিয়ে আসার পরপরই মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে জেলাব্যাপী। মুহূর্তের মধ্যে জেলাব্যাপী নেমে আসে শোকের ছায়া। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ জেলার সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, দল মত নির্বিশেষে আবাল, বৃদ্ধ বনিতারা এক নজর মরহুমের মরদেহ দেখার জন্য ছুটে আসে চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড পাড়ার বাসায়। স্ত্রী-সন্তান, নিকট আত্মীয়-স্বজনসহ শুভাকাক্সক্ষীদের কান্না আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এরপর পারিবারিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী টাউন ফুটবল মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় দল মত নির্বিশেষে হাজারো মানুষ শরিক হন। জানাজাস্থলে মরহুমের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কথা উল্লেখ করে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরীফ। পরিবারের পক্ষে মরহুমের জন্য দোয়া চেয়ে কথা বলেন, মরহুমের সহোদর মকসুদুল হক মালিক ও মরহুমের একমাত্র পুত্র সন্তান সালমান ফারসীদ মালিক।
পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুম মজিবুল হক মালিক মজু মিয়ার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া চেয়েছেন তার সহোদর শাহরিন হক মালিক ও মইনুল হক মালিক। মইনুল হক মালিক বলেন, আগামী রোববার বাদ আসর আমার ভাইয়ের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে সকলকে শরীক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার রেললাইন সংলগ্ন জান্নাতুল বাকী পারিবারিক কবরস্থানে বেদনা বিধুর পরিবেশে মরহুম মুজিবুল হক মালিক মজু মিয়ার দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়। মরহুমের নামাজে জানাজা পরিচালনা ও দাফন পরবর্তী দোয়া পরিচালনা করেন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড পাড়া বাইতুল আকছা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমাদুল হক।
মরহুমের নামাজে জানাজা ও দাফন কার্যে শরীক হন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, মো. সফিকুল ইসলাম পিটু, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মনি, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম নজু, দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আবুল হাসনাত, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো আখতার হোসেন জোয়ার্দার, সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হক রোকন, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মো. আজিজুর রহমান পিন্টু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান লিপটন, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল হাসান তনু, দর্শনা পৌর বিএনপির নেতা মো. হাবিবুর রহমান বুলেট, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো সাইফুর রশীদ ঝন্টু, জেলা কৃষক দলের আহবায়ক মোকাররম হোসেন, সদস্য সচিব বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান তোবারক হোসেন, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিমুল হাবিব সেলিম, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব এমএ তালহা, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মতিয়ার রহমান মিশর, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান সাদিদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. শাহজাহান খান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিপ্লব হোসেনসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।