বয়সের ভারে নূয়েপড়া বৃদ্ধ বৃদ্ধা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায়

আনোয়ার হোসেন: বয়সের ভারে যার শরীরটাই নিজের কাছে বোঁঝা, সেই বৃদ্ধ উম্বাত আলী তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী মেহেরন বেগমকে হুইল চেয়ারে নিয়ে ঘুরছেন পথে পথে। হাতবাড়াচ্ছেন মানুষের কাছে। কেনো? এই বয়সেও ভিক্ষা করতে হচ্ছে কেনো? বৃদ্ধ বৃদ্ধাভাতা পান না? প্রতিবন্ধী ভাতাও কি দেয় না?
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের জাফরপুরের বাসিন্দা উম্বাত আলী। তিনি বললেন, চেয়ারম্যান মেম্বার কিছুই দেয় না। এক সময় চাষ করতাম। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেও দিনমজুর। মেয়ের বাড়ি ঝিনাইদহ থেকে আলমসাধুতে চড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় স্ত্রী মেহেরন বেগম দুটি পা হারান। চিকিৎসা করতে সহায় সম্বল বলতে যা ছিলো সবই গেছে। এখন ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলেই বৃদ্ধ বয়সে বুড়ো বুড়িকে রাস্তায় নামতে হয়েছে।
উম্বাত আলীর বয়স বর্তমানে ঠিক কতো? নিশ্চিত করে তিনি বলতে না পারলেও তার অনুমান একশর কাছাকাছি। স্ত্রীর বয়সও আশি পার। তিনি আরও বললেন, শরীর চলে না। সারা শরীরেই ব্যথা। চোখেও ঠিকমত দেখি না। স্ত্রীর দু পা নেই। দুর্ঘটনায় প্রাণ বাঁচলেও ওকে পঙ্গু করেছে। এই বয়সে ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করা যায় না। পেটের তাগিদেই মানুষের কাছে হাত পাতি। একেকদিন একেকদিকে যাই। যা হয় তাতে দুজনের দুবেলা খাওয়াটা হয়ে যায়। এছাড়া কি করবো? মেম্বার চেয়ারম্যানদের বলেছি। ছেলে দিনমজুরি করে। ওর সংসারই ঠিকমতো চলে না। আমাদের খাবার দেবে কীভাবে?
উম্বাত আলী বললেন, এক সময় অল্প কিছু জমিতে চাষাবাদ করে ভালোই চলতাম। বয়সকালে দিনমজুরিও করতাম। বয়সের ভারে কিছুই করতে পারি না। শরীর চলে না। পেট চালাতে রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করছি। ভিক্ষা করা আইনত দ-নীয় অপরাধ জানেন? এ প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধ উদাস চোখে তাকিয়ে থাকলেন প্রতিবেদকের দিকে। জীবনযুদ্ধে হাপিয়ে ওঠা দম্পতি সরকারি অনুদান আদৌ কি পাবে? এ প্রশ্নের জবাব দেবেন কি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা?

Comments (0)
Add Comment