মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব: ১১৩ মণ্ডপে উৎসবের রঙ, আলো ও নিরাপত্তার চাদরে আনন্দঘন পরিবেশ

স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গায় আজ সোমবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দেবীর আগমনী সুরে ইতোমধ্যেই উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদে। পূজামণ্ডপগুলো রঙিন আলোয় ঝলমল করছে, ঢাক-ঢোল, শঙ্খ আর উলুধ্বনির সঙ্গে মিশে গিয়েছে ধর্মীয় আবেগ ও আনন্দের মেলবন্ধন।

সকালে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের আচার। এর মাধ্যমে শুরু হলো দেবী দুর্গার পূজার মূল আয়োজন।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর মোট ১১৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন আগেই। এখন চলছে চূড়ান্ত সাজসজ্জা। মণ্ডপগুলোতে দেখা যাচ্ছে কোথাও ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ শিল্পকর্ম, আবার কোথাও আধুনিক থিমভিত্তিক অলংকরণ। শহর থেকে গ্রাম— সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আবহ।
উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা, মোতায়েন রয়েছে পুলিশের টহল দল ও আনসার বাহিনী। মন্দির কমিটিগুলোও গঠন করেছে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, যারা দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছে।

শহরতলীর দৌলাতদিয়ার দক্ষিণ পাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জায়। প্রতিমা ও প্যান্ডেল সাজানোর কাজ প্রায় শেষ। ঢাকের তালে তালে তৈরি হয়েছে এক মহা উৎসবের পরিবেশ।

মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন,
“এবার আমরা ভক্তদের জন্য বিশেষ আয়োজন রেখেছি। প্রতিদিন আরাধনার পাশাপাশি থাকবে ধুনুচি নৃত্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা। ভক্তদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আমাদের মন্দির ভক্ত-দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হবে।”
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে পৃথিবীতে আগমন করছেন এবং বিদায় নেবেন দোলায় (ঝাঁপিতে)। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর আগমনী এই যাত্রা অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে পৃথিবীতে শান্তি, শুভশক্তি ও সম্প্রীতির বার্তা বয়ে আনবে।

আগামীকাল সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। অষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা ও মহাসন্ধিপূজা, নবমীতে থাকবে চণ্ডীপাঠ, মহাহোম ও ভোগ আরতি। সবশেষে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে এ বছরের দুর্গোৎসবের।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ বলছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে নানা নিরাপদের চাদরে মোড়ানো সব পূজা মন্ডপ ও মন্দির । নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে তাদের এ আয়োজন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে হবে বলে আশাবাদী প্রশাসন।

চুয়াডাঙ্গা শহরের অলিগলি, বাজার, গ্রামীণ জনপদ— সর্বত্রই এখন উৎসবের রঙ। কাশফুলের দোল, শঙ্খধ্বনি আর ধুনুচি নৃত্যের আবেশে মেতে উঠেছে মানুষ। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সন্ধ্যার আরতি ও ঢাক-ঢোলের তালে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তটির জন্য।