মেহেরপুরে ২য় স্ত্রী জরিনা হত্যার রায় : স্বামী সাইদুল ও প্রথম স্ত্রী জমেলার ফাঁসি

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে দ্বিতীয় স্ত্রী জরিনা খাতুনকে হত্যার দায়ে স্বামী সাইদুল ইসলাম ও তার প্রথম স্ত্রী জমেলা খাতুনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস এ রায় দেন। সাজাপ্রাপ্ত সাইদুল ইসলাম মেহেরপুর সদর উপজেলার ইচাখালী গ্রামের নবীর উদ্দিনের ছেলে এবং জমেলা খাতুন সাইদুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী। নিহত জরিনা খাতুন সাইদুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী। ফাঁসির দ-াদেশ প্রাপ্ত সাইদুল ইসলাম ও তার প্রথম স্ত্রী জমেলা খাতুন পলাতক রয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের সুরনিশা ভিটার মাঠে আল আমিনের মসুরীর ক্ষেতে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় জরিনা খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে একই সালের ৩১ জানুয়ারি জরিনা খাতুন নিখোঁজ হন। লাশ উদ্ধারের পর নিহত জরিনা খাতুনের বোন ফেরদৌসী খাতুন তার লাশ শনাক্ত করেন। পরে তিনি বাদী হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন মেহেরপুর সদর থানার এসআই হাসান ইমাম মামলার প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেন এবং নিহত জরিনার স্বামী সাইদুল ইসলাম ও তার প্রথম স্ত্রী জমেলা খাতুনকে আসামি করে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। আটক দুজন হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন। এতে সাইদুল ইসলাম ও তার প্রথম স্ত্রী জমেলা খাতুন দোষী প্রমাণিত হওয়ায় সাইদুল ইসলাম ও তার প্রথম স্ত্রী জমেলা খাতুনকে ফাঁসির দন্ডাদেশ এবং একই সাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদ-ে দ-িত করেন।
মামলায় সরকার পক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন অতিরিক্ত পিপি কাজী শহিদুল ও আসামি পক্ষের কৌঁসুল ছিলেন অ্যাড. মো. শহিদুল ইসলাম।
ফিরে দেখা: ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে যাদবপুর গ্রামে গোরস্তানের ঠিক বিপরীত দিকে সার্কাস এবং আনন্দ মেলা চলছিলো। সেই সময় হঠাৎ করেই তার বিপরীত দিকে সুরনিশা ভিটার মাঠে আল আমিনের মসুরীর ক্ষেতে মাটিতে পুঁতে রাখা এক নারীর লাশ দেখে কুকুর ডাকাডাকি শুরু করে। ওই কুকুরটির ডাক-চিৎকার দেখে মাঠে কাজ করা অবস্থায় লোক সেখানে ছুটে যান। ওই সময় মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় শাড়ি কিম্বা অন্য আরেকটি অংশ দেখে তাদের সন্দেহ হয়। মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পেঁৗঁছে মাটি খুঁড়ে এক নারীর অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে। ওই সময় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে লাশ উদ্ধারের পর ফেরদৌসী খাতুন নামের এক নারী কান্নাকাটি শুরু করেন এবং নিহত নারীর মরদেহ তার বোন জরিনার বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
ওই সময় ফেরদৌসী তার আহাজারিতে বলেছিলেন তার ছোট বোন জরিনাকে কয়দিন যাবৎ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তার ভগ্নিপতি সাইদুল এবং সাইদুলের প্রথম স্ত্রী জমেলা খাতুনের সাথে ঝগড়া হয়েছিলো বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। ওই ঘটনাটি তৎকালীন সময়ে পুরো মেহেরপুরজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছিলো।

Comments (0)
Add Comment