মেহেরপুর মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিকে অবৈধ গর্ভপাত

মৃত্যু শয্যায় প্রেমিকা : আত্মগোপনে প্রেমিক গাংনীর কাঠমিস্ত্রি কামাল

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের মেডিপ্যাথ নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রেমিকার অকাল গর্ভপাত ঘটিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রেমিক কামাল হোসেন। গর্ভপাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেই প্রেমিকা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এদিকে অকাল ভুমিষ্ঠ হয়ে মৃত্যুবরণ করা শিশুটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে পাঠিয়েছে গাংনী থানা পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছে প্রেমিক গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি কামাল হোসেন। আর সমালোচনায় পড়েছে সাত মাসের অবৈধ গর্ভপাত ঘটানো ডায়াগনস্টিক সেন্টার মেডিপ্যাথ।
ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বামানগর গ্রামে কাজ করতে গিয়ে কাঠমিস্ত্রি কামাল হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক হয় ওই নারীর সাথে। এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েন তিনি। নিজের অপকর্ম ঢাকতে কৌশলে মেয়েটিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুর শহরের কাটাইখানার সামনে মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটায়। প্রচুর রক্তক্ষরণে ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফেলে পালিয়ে যায় কামাল হোসেন। সেই সাথে ডায়গনস্টিক কর্তৃপক্ষ অবৈধ কর্মকা- ঢাকতে কৌশলে গর্ভপাত ঘটানো নারীকে মৃত শিশুসহ তাড়িয়ে দেয়।
একটি কাগজে সই করিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে কামাল দাবি করলেও এর কোন কাগজ তাকে দেয়া হয়নি। এরপর থেকেই তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গোপনে ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। স্ত্রী হিসেবে পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতি চাইলে বার বার কৌশলে এড়িয়ে গেছেন কামাল। বিয়ের কোন কাগজপত্র তার কাছে না থাকায় কামালের বাড়ি ওঠা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না বলে জানান ওই নারী ও তার পরিবারের লোকজন।
ওই নারীর এক বোন যিনি সার্বক্ষণিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, চেকআপ করার কথা বলে আমার বোনকে মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে। কামাল হোসেন আগে থেকেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের সাথে গর্ভপাত ঘটানোর আলাপ সেরে রেখেছিলেন। সেখানে কর্মরত সেলিম রেজা যিনি নিজেকে ডাক্তার দাবি করে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য ইনজেকশন দেন। ইনজেকশন দেয়ার পরই আমার বোনের পেটে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। যখন গর্ভপাত ঘটে তখন আমি এ বিষয়টি বুঝতে পারি। প্রতারণা টের পেয়েই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে খবর দেয়। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য আমাদের আর কিছুই করার ছিলো না।
এদিকে নিরুপায় হয়ে প্রেমিকা বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কামাল হোসেনের বাড়িতে অবস্থান নেয়। তবে তার আগেই কামাল হোসেন তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। ফলে কামালের বাড়ির একটি কক্ষে মৃত শিশুটিকে নিয়ে অবস্থান নেয় ওই নারী এবং তার পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল সেখান থেকে শিশুটি উদ্ধার করে। একই সাথে অসুস্থ নারীকে গাংনী হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় ভুক্তভোগীরা।
ওই নারীর কাছে মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপত্র ও রিপোর্ট রয়েছে। ব্যবস্থাপত্রে নাম রয়েছে ডা. সেলিম রেজা। যিনি প্যারামেডিক এবং বিভিন্ন রোগের অভিজ্ঞ বলে ব্যাবস্থাপত্রে দাবি করেছেন। এ রকম একজন ব্যক্তি কিভাবে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করছেন? আর ব্যবস্থাপত্রে নিজেকে ডাক্তার দাবি করছেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মোবাইলফোনে যোগাযোগ করলে ওই ডায়াগনস্টিকের পরিচালক পরিচয়দানকারী ইমরান হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে আপনাদেরকে জানাবো।
অবৈধ গর্ভপাত ও প্রতারণার বিষয়ে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, খোঁজ নিয়ে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অকাল গর্ভপাতের শিশু উদ্ধারকারী গাংনী থানার এসআই জহির রায়হান জানান, মরদেহ সুরতহাল করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

Comments (0)
Add Comment