মেহেরপুর যাদুখালী দাদপুর স্লুইজ গেট বন্ধ করে মাছ চাষ

৩-৪ গ্রামের মাঠ পানির নিচে : ৫০ কোটি টাকার মরসুম ফসল ক্ষতির মুখে
মহাসিন আলী: মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনে অবস্থিত দাদপুর স্লুইজ গেট বন্ধ থাকায় মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মাঠের উঠতি ফসল বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ধরনের অভিযোগ করেছেন সদর উপজেলার কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও পিরোজপুর গ্রামের কৃষকরা। এ মরসুমে হাজার হাজার বিঘা জমির উঠতি ফসল পানির নিচে ডুবে থাকায় চলতি মরসুমে ভুক্তভোগী কৃষকদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এলাকার দাদপুর বিলের (নেংড়ু ও টোপলার বিল সংলগ্ন) মাছ চাষিরা স্লুইজ গেট বন্ধ করে রাখায় এলাকার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে চলেছে।
এলাকাবাসী জানায়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, গাড়াডোব, কসবা-ভাটপাড়া, সদর উপজেলার দরবেশপুর, সিংহাটি, চুয়াডাঙ্গার গোকুলখালীসহ এলাকার পানি কাজলা নদী দিয়ে ভৈরব নদে নামার জন্য জমেছে দাদপুর বিল ও বিল সংলগ্ন বিভিন্ন মাঠে। এদিকে স্লুইজ গেটটি খুলে না দেয়ায় পানির চাপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মরসুমি ফসল বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে এলাকাবাসীকে যাদুখালী হয়ে গোপালপুর গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি স্লুইজ গেটের ওপর দিয়ে। পানির চাপ বৃদ্ধি পেলে ভেঙে যেতে পারে রাস্তাটি।
গোপালপুর গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী জানান, গোপালপুর গ্রামের মাঠে মরসুমে তিনি ৮ বিঘা জমিতে ধান, ৬ বিঘা জমিতে পাট, এক বিঘা জমিতে সিম ও ১০ কাঠা জমিতে ঝাল চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আর দুই-চার দিন ফসল পানির নিচে থাকলে তাকে এ মরসুমে কমপক্ষে ৪ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। গোপালপুর মাঠে একই গ্রামের স্বপন মাস্টার আড়াই বিঘা জমিতে ধান, আতিরুল আড়াই বিঘা জমিতে সিম, মিজানুর ২ বিঘা জমিতে ধান, এক বিঘা জমিতে পাট ও এক বিঘা জমিতে সিম, কামরুল এক বিঘা জমিতে ধান ও ৪ বিঘা জমিতে পাট, তাইজুল ২ বিঘা জমিতে ধান, এক বিঘা জমিতে সিম ও এক বিঘা জমিতে ঝাল এবং মতিন খন্দকার ও তাদের অন্যান্য ভাইরা ১০ বিঘা জমিতে ধান, ৩ বিঘা জমিতে পাট, ২ বিঘা জমিতে সিম ও এক বিঘা জমিতে ঝাল চাষ করেছেন। কৃষকরা জানালেন, তাদের এসব ফসল বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অতিদ্রুত পানি সরাতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে তাদের।
মেহেরপুর জেলা জাতীয়পার্টির (এরশাদ) সভাপতি গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, গোপালপুর মাঠের ফসল বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন জরুরি। তা না হলে শুধু ওই মাঠের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির ফসল বাবদ গ্রামের কৃষকদের ১৫ কোটির অধিক টাকার ক্ষতি মেনে নিতে হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কাঁঠালপোতা গ্রামের আলাই আমিনসহ এলাকার অনেকে বলেন, স্লুইজ গেট বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি ভৈরব নদে নামতে পারছে না। বিধায় শুধু গোপালপুর মাঠই নয়; পাশাপাশি কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, গহরপুর ও বলিয়ারপুর গ্রামের মাঠের মরসুমি ফসল পানিতে তলিয়ে আছে। পানি না সরলে এসব মাঠের ফসল বাবদ প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এলাকার কৃষকদের।
দাদপুর বিলের সেক্রেটারি নগেন হালদার ফসলের ক্ষতি হতে পারে স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে স্লুইজ গেটটি দিয়ে সীমিত আকারে পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে স্লুইজ গেটটি সম্পূর্ণ খুলে দেয়ার ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদুল আলম বলেন, স্থানীয়ভাবে সোনাপুর, কাঁঠালপোতা, বলিয়ারপুর, গহরপুর এলাকার কোনো মানুষ আমার কাছে কোনো অভিযোগ দেননি। তবে আমার জানামতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দলিয়ারপুর এলাকার একটি বাঁধ কেটে দেয়ায় অত্র এলাকায় পানি ঢুকছে। ওই পানি নিষ্কাশনে আমি সংশ্লিষ্ট পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ^াসকে যাদুখালীর দাদপুর স্লুইজ গেটের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওসমান গনি বলেন, গোপালপুর মাঠের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বেশ কিছু কৃষক আমার অফিসে আসেন এবং তারা একটি অভিযোগ দিয়ে যান। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এদিন বিকেলে মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ মো. আমাম হোসেন মিলুসহ ঘটনাস্থলে যান এবং স্লুইজ গেটির একপাশে নষ্ট দেখি। অন্যপাশ দিয়ে সামান্য পানি বের হচ্ছে। আমি নিজেই চেষ্টা করি বেশি পানি বের করে দেয়ার জন্য। কিন্তু বলা যায় চেষ্টা সেভাবে সার্থক হয়নি। তিনি আরও বলেন, যদি দু’এক দিন বড় ধরনের বৃষ্টি না হয়; তবে পানি নেমে মাঠের জলাবদ্ধতা দূর হবে।

Comments (0)
Add Comment