রেকর্ড মৃত্যুর দিনে শনাক্ত সর্বাধিক রোগী : বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ না করার আহ্বান

দেশে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনা : আরও ৪৫ জনের মৃত্যু শনাক্ত ৩ হাজার ১৭১ জন
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার তিন মাসের মাথায় এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেলো, সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছে। দেশে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যু। সুস্থতার তুলনায় শনাক্তের হার বেড়েই চলেছে। গত একদিনে এযাবৎ সর্বোচ্চ মৃত্যুর দিনে রেকর্ডসংখ্যক শনাক্তও হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুনভাবে শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৭১ জন। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছেন ৯৭৫ জন এবং সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে ৭১ হাজার ৬৭৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ৭৭৭ জন। মোট সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৩৬। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে মঙ্গলবার এসব তথ্য তুলে ধরেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বাসায় অক্সিজেন কিনে রাখছেন। এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। কারণ দক্ষ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ অক্সিজেন প্রয়োগ করলে তা রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। করোনা রোগীর অনেক সময় হাইফ্লো অক্সিজেন দিতে হয়, যা বাসায় দেয়া সম্ভব নয়। অক্সিজেন থেরাপিতে প্রতি মিনিটে কতো লিটার বা মিলিলিটার অক্সিজেন যাবে তা শুধু একজন চিকিৎসক নির্ধারক করে দেন। একজন টেকনোলজিস্ট সেটা মেজারমেন্ট করেন। তাই দক্ষ চিকিৎসক বা টেকনোলজিস্ট ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার করে নিজের বিপদ নিজে ঢেকে আনবেন না। মেডিকেল জিনিসপত্র বাসায় অযথা মজুদ রাখবেন না। এতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। ব্যক্তি পর্যায়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুদ নিরুৎসাহিত করেন তিনি।
নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য নতুন করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ গাজীপুরে নতুন আরেকটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এখন দেশে সর্বমোট ৫৬টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫টি ল্যাবে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৬৬৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৯৪৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিলো। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৯৫টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ। আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৪০ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ, ১২ জন নারী। এদের ২৮ জন ঢাকা বিভাগের, ১১ জন চট্টগ্রাম, ২ জন সিলেট, ২ জন রাজশাহী ও ২ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮ জনের বয়স ছিলো ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। ১০ জনের ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ১৫ জনের ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ২ জনের ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিলো। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৫৫৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন সাত হাজার ৮৯৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২১৬ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন চার হাজার ৫৩৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে দুই হাজার ৬০২ জনকে। এখন পর্যন্ত তিন লাখ ছয় হাজার ২৭ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ৩৬ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন দুই লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৯ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৬ হাজার ৬৩৮ জন। করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাইকে অনুরোধ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।

Comments (0)
Add Comment