স্টাফ রিপোর্টার: ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যকে নিয়ে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন-২০২৫ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে র্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে যে রাজস্ব দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আমাদের ব্যয় করতে হয় স্বাস্থ্য খাতে। তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার যদি আমরা প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলে ক্যান্সারসহ তামাকজনিত যে সব রোগ হয়, সেগুলোর পেছনে আমাদের এত ব্যয় করতে হবে না। রোগ প্রতিরোধে নজর দিতে হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ আমাদের গড়তেই হবে। বক্তারা আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন’ এ আমরা স্বাক্ষর করেছি, অথচ একইসঙ্গে তামাক কোম্পানিগুলোর বোর্ডেও সরকার আছে যাতে তাদের ব্যবসা ভালোভাবে চলে। এই বৈপরীত্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের এসব কথা স্পষ্টভাবে বলা উচিত। এখন যদি আমরা এসব বলতে না পারি, তাহলে আর কখনও পারবো না। তামাক কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের শোষণ করছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, তারা আমাদের শ্রমিকদের শোষণ করে, দেশের মাটি, আলো-বাতাসে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা আমরা কখনও মেনে নিতে পারি না। তামাকের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে কার্যকর করতে হলে সংশোধন করতে হবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। তামাক কোম্পানিগুলো কোমলপ্রাণ কিশোর-তরুণদের নানা উপায়ে তাদের পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করছে, নানা রকম বাধা সৃষ্টি করছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এসব বাধা মোকাবিলা করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে দেশকে তামাকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে।
চুয়াডাঙ্গায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্ষালয়ের সামনে বেলুন উড়িয়ে কার্ষক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনাসভা। এতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বদরুল আলম ও ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ। আলোচনা শেষে তামাক বিরোধী রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিন শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত অতিথিরা। এদিকে, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে র্যালি, আলোচনা সভা অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে র্যালি শেষে শহীদ আবুল কাশেম সড়কে ‘মোড়কে উল্লেখিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এমআরপিতে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিশ্চিত করা হোক’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচি শেষে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহাজাহান আলী বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রভাষক মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দীন, প্রভাষক হেলেনা নাসরীন, জাহান্নারা যুব মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাহানারা খাতুন, অন্বেষা যুব নারী কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক লিজা হোসাইন। উদ্যোক্তা মালা খাতুন, মরিয়ম খাতুন, খুরশিদা খাতুন, কবিতা খাতুন ও তৃষ্ণা খাতুন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়কারী সাইদুর রহমান। সহযোগিতায় ছিলেন সংস্থার সহসমন্বয়কারী আসাদুজ্জামান, হামিদুল ইসলাম, আব্দুর রহমান।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেরেহপুরে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনাসভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনাসভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে সরকারি কমিশনার শাকের আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার আব্দুল আল মামুন, তামাক বিরোধী জোটের সদস্য রফিক-উল- আলম, এনজিও সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, মো. জায়ান। এর আগে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষে একটি র্যালি বের করা হয়। সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির হোসেন শামীমের নেতৃত্ব র্যালিটি পাবলিক লাইব্রেরির মোড় থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এসে শেষ হয়। র্যালিতে অন্যদের মধ্যে সহকারী কমিশনার সাজিদুল ইসলাম, শেখ তৌহিদুল কবীর, হাবিবুর রহমান, আবীর আনসারী, এস্তামুল হক, সিভিল সার্জন অফিসার ডা. ইনজামামুল হক, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহিম, গবেষণা কর্মকর্তা আক্তার হোসেন, জেলা তথ্য অফিসার আব্দুল আল মামুন, টি আই ইসমাইল হোসেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার শামীম উদ্দিন, এনজিও সমিতির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।