সাপে কাটা রোগী নিয়ে কবিরাজের ঝাড়ফুক নাটক, অবশেষে মৃত্যু

কবিরাজের কথামতো গোসলের পর আবার মরদেহ নেয়া হয় হাসপাতালে

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার বয়রা গ্রামে সাপে কেটে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে নিজ বাড়িতেই একটি বিষধর সাপ তাকে দংশন করে। রাতেই স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে নিয়ে করা হয় দফায় দফায় ঝাঁড়ফুক। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জাহাঙ্গীর। ভোরে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। মরদেহ বাড়িতে নিয়ে গোসল শেষে দাফনের আগ মুহূর্তে শুরু হয় কবিরাজের চিকিৎসা। কবিরাজের কথামতো বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আবারও জাহাঙ্গীরের মরদেহ নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়। মরদেহ নিয়ে কবিরাজের এ নাটকীয়তার ঘটনাটি ঘটেছে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বয়রা গ্রামে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বয়রা গ্রামের মৃত নূর বকসের ছেলে এক সন্তানের জনক জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ঘরের বাইরে বের হন। এসময় বিষধর সাপে তাকে কামড় দেয়। তার চিৎকারে পরিবার ও আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। সাপে দংশনের পর প্রথমে গ্রামের এক কথিত কবিরাজের কাছে নেয়া হয়। দফায় দফায় চলে ঝাড়ফুঁক। অবস্থার অবনতি হলে ভোরের দিকে তাকে চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজন মেহেরপুর হাসপাতালে ভর্তি করার উদ্দ্যেশে রওনা হলে পথিমধ্যে জাহাঙ্গীর মারা যায়। পরিবারের লোকজন সকালে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে। মারা যাওয়ার বিষয়টি স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দেয়া হয় মাইকের মাধ্যমে। কিছুক্ষণ পরে মরদেহ গোসল করে কাফনের কাপড় পড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো পরিবারের লোকজন। এসময় জাহাঙ্গীর জীবিত আছে বলে দাবি করেন কথিত এক কবিরাজ। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বলেন তিনি। কথামত বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মাইক্রোবাস যোগে মরদেহ আবার চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহাঙ্গীরকে মৃত ঘোষণা করলে আবারও নেয়া হয় বাড়িতে। মরদেহ নিয়ে দিনভর ওঝা-কবিরাজের এই নাটকীয়তা দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন গ্রামের সচেতন ব্যক্তিরা। আবার অনেকেই বলেছেন, যার যায়, সে-ই বোঝে। প্রিয়জনকে বাঁচানোর জন্য মানুষ অনেক কিছুই করে। যে যা পরামর্শ দেয়, স্বজনরা তাই-ই করার চেষ্টা করে থাকে। যদি বেঁচে যায়। তবে, ওঝা-কবিরাজের ঝাড়ফুঁক নিয়ে বিব্রত অনেকেই বলেছেন এ যুগেও কবিরাজ? স্থানীয়রা জানান, ওঝার কাছে না নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হয়তো জাহাঙ্গীরকে বাঁচানো যেতো। সর্প দংশনের পর প্রায় ৫ ঘন্টা সময় পাওয়া গিয়েছিলো।

Comments (0)
Add Comment