সৌদি পুলিশের হাতে আটক মতিয়ার গাংনীর সিন্দুরকোটা গ্রামের বাসিন্দা

স্টাফ রিপোর্টার: ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে আটক হওয়া মতিয়ার রহমান ওরফে মন্টুর পরিচয় মিলেছে। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা গ্রামের মৃত হারুনুর রশীদের ছেলে। হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি গমনের পর মালামাল হারানোর নাটক করে ভিক্ষা করছিলেন তিনি।

এক সময়কার  ত্রাস মতিয়ার রহমান এখন দেশ-বিদেশে ভিন্ন কৌশলে ভিক্ষা করে পরিবার পরিচালনার পাশাপাশি অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে মুচলেকায় ছেড়ে দিয়েছেন এমন ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মেহেরপুরসহ সারা দেশে হৈচৈ পড়েছে। তার বিরুদ্ধে ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। আটকের ঘটনায় দেশ-বিদেশে মতিয়ার রহমানকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা  ও সমালোচনা।

জানা গেছে, মতিয়ার সৌদি আরবে যান ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেখানে ব্যাগেজ হারিয়ে যাবার নাটক সাজিয়ে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। এ ঘটনায় ২২ জুন মতিয়ার সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন। ওই হজযাত্রীকে ‘গাইড করার মত কোনো মোয়াল্লেম এবং বসবাসের বাড়ি বা হোটেলও ছিল না। গত ২৫ জুন ওই এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন।

ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেলকে পাঠানো নোটিসে বলা হয়, ‘আপনার এজেন্সির একজন হজযাত্রী মো. মতিয়ার রহমান মদিনা শরিফে ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এবং এ ঘটনা জানার পর বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী থানায় মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।’ তবে কি জবাব দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি।

এলাকাবাসী জানান, মতিয়ার রহমান ছাত্রাবস্থায় ডানপিটে ছিলেন। কুষ্টিয়াতে পড়ালেখা করার সময় গাংনীর একটি সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দেন। বোমা প্রস্তুতের সময় তা বিষ্ফোরিত হয়ে দু’হাতের কব্জি উড়ে যায়। সে থেকে পঙ্গুত্বকে পুঁজি করে নানা অপকর্ম করে এমন অনেক অভিযোগ মতিয়ারের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি ও দাঙ্গা হাঙ্গামার অভিযোগে ২০১২ ও ২০১০ সালে গাংনী থানায় দুটি মামলা হয়। কুষ্টিয়া থানায় তার নামে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে ইতোমধ্যে খালাস পান মতিয়ার রহমান ওরফে মন্টু।

মতিয়ার রহমানের বড় ভাই আতিয়ার রহমান বলেন, আমার ভাই গত বছর হজে যাবার কথা ছিল। অফিসিয়াল জটিলতায় সে হজে যেতে পারেনি। এ বছর আগে থেকেই চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি নিয়ম অনুযায়ী হজব্রত পালন করতে গিয়েছেন। তাছাড়া আমার বাবার জমি জমা ভাগাভাগি করে নিয়েছি। ১০ থেকে ১২ বিঘা জমির মালিক আমার ভাই। তবে সৌদিতে আটকের বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছেন।

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন জানান, আমার স্বামী হজ পালন করতে গিয়েছেন। সেখানে কি হয়েছে তা জানি না। তবে কয়েকজনের মুখে আমার স্বামী সেখানে আটক হয়েছেন শুনেছি। এখন তিনি বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুই বলতে পারছি না। মতিয়ার রহমানের এক ছেলে এক মেয়ে। পরিবারেরর সকলেই বিষয়টি নিয়ে বিষ্মিত ও চিন্তিত হড়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ফারুক হোসেন জানায়, আমরা অনেক ছোট থাকাবস্থায় তার দুটি হাত কেটে ফেলা হয়েছিল। লোকমুখে গল্প শুনেছি তিনি নাকি বোমা বানাতে গিয়ে বিষ্ফোরণের ঘটনায় দু’হাতের কব্জি উড়ে যায়। তার বিষয়ে এলাকার মানুষ এখনও সমালোচনা করেন। তবে তিনি মাঝে মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যান।

একটি সূত্র জানায়, মতিয়ার রহমান চিকিৎসার অজুহাতে ভারতে গমন করে সেখানেও নানা কারণ দেখিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে। ভারত হয়ে আফগানিস্তানে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহাম্মেদ জানান, মতিয়ার রহমান এলাকয় কখনো ভিক্ষা কিংবা সাহায্য নেয় না। দুটি হাত না থাকায় বিভিন্ন দেশে গিয়ে ভিক্ষা বা সাহায্য চেয়ে এলাকায় জমি জিরাত করেছেন। তবে তিনি সৌদি আরবে যা করেছেন তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন। আমাদের জেলার সুনাম ক্ষুণœ করেছেন। বিষয়টি ন্যাক্কারজনক বলেও ম›তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।

গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, মতিয়ারের ব্যাপারে তিনি শুনেছেন এবং যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে মতিয়ারের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় দুটি মামলা ছিল যা আদালত তাকে খালাস দিয়েছে।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন. এমন ঘটনা জানতে পেরেছি। বিষয়টি  আমাদের এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়।

 

Comments (0)
Add Comment