স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে চুয়াডাঙ্গার কলেজছাত্রীর মুজিবনগরে অবস্থান

মানতে নারাজ শ্বশুর-ভাসুর : গ্রামবাসীর বাঁধায় মারধর করেও তাড়িয়ে দিতে ব্যর্থ

মুজিবনগর প্রতিনিধি: মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে স্ত্রীর স্বীকৃতি আদায়ে স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন রিয়া খাতুন (২০) নামের এক কলেজ ছাত্রী। রিয়া খাতুনের স্বামী তাহের খান দুবাই প্রবাসী হওয়ায় শ^শুরবাড়ীর লোকজন তাকে মেনে না নিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ঘরে উঠতে না দেয়ায় অনাহারে দ্বিতীয় দিনের মত অবস্থান নিয়ে শ^শুর বাড়ির বারান্দায় রাতযাপন করছেন রিয়া খাতুন। প্রথম দিন মুজিবনগর থানা পুলিশ রিয়া খাতুনের নিরাপত্তার জন্য বাড়ির বাইরে থেকে ঘরের বারান্দায় তুলে দিলেও দ্বিতীয় দিনে নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে বাড়ি ছাড়াবার চেষ্টা করে গ্রামবাসীর সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ইসলামপাড়ার মরহুম মাসুম আলীর মেয়ে রিয়া খাতুন। বর্তমানে রিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা আঁখিতারা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রী। রিয়া জানান, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে তাহের খানের (২২) সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে  মোবাইল ফোনে কথাবার্তা। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাহের খান বিদেশ যাবে বিধায় রিয়া খাতুনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং জানান প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলে তিনি বিদেশ যাবেন না। অবশেষে গত ৭ মে-২০২২ তারিখে চুয়াডাঙ্গার এক কাজি অফিস থেকে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে তারা বিয়ে করেন এবং গত ১৪ মে-২০২২ তারিখ রিয়াকে সোনার হরিণ ধরে দিতে স্বামী তাহের খান দুবাই পাড়ি দেন। রিয়া খাতুন আরো জানান, দুবাই যাওয়ার পর থেকে দু’জনের মধ্যে স্বামীর স্ত্রীর মতো কথাবার্তা ও ম্যাসেজ বিনিময় হতে থাকে। ইতোমধ্যে প্রায় একমাস ২০ দিন আগে রিয়া খাতুনের দিনমজুর পিতা মাসুম আলী মেয়ে রিয়া, তার মা রুনা খাতুন ও একমাত্র ছোট ভাই নিরবকে রেখে মারা যান। এতে রিয়ার চোখে অন্ধকার নেমে আসে। এদিকে হঠাৎ স্বামী আবু তাহের ফোন বন্ধ করে দেয়। কয়েক দিন পর রিয়া খাতুনের বড় জা রুমানা খাতুন তাকে মোবাইল ফোনে জানান, তিন লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে এলে তাকে তার শ^শুর-শাশুড়ী মেনে নেবেন। তার বিয়ের পর এমনই নাকি ঘটেছিলো তার ক্ষেত্রে।

এক প্রশ্নে জবাবে রিয়া খাতুন জানান, ভালোবাসা অপরাধ নয়। তারপরে বিয়ে। আমি এখন এ বাড়ির বউ। আমি কি শ^শুর বাড়ি আসতে পারি না? তবে কেন আমার শ^শুর-শাশুড়ী এবং ভাসুর আমাকে মেনে না নিয়ে মারধর করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে ? আমি স্ত্রীর স্বীকৃতি চাই এবং স্বাীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আমি চুয়াডাঙ্গা ফিরবো না। প্রয়োজনে স্বামীর বাড়িতে মরবো।

রিয়া খাতুনের একমাত্র ভাসুর বাহার আলী খান জানান, আমার ভাই তাহের খানের বয়স এখনও ২৩ বছর পূর্ণ হয়নি। তাই আমরা এ বিয়ে মানি না।

রিয়া খাতুনের শ^শুর আবুল কালাম বলেন, বিয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার ছেলে তাহের খান দেশে ফিরলে তার কথামত আমরা ব্যবস্থা নেবো।

এদিকে রোববার মুজিবনগর থানা পুলিশ রিয়া খাতুনকে নিরাপত্তার কারণে ঘরে তুলে দিলে শ^াশুড়ি বানুয়ারা খাতুন তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। গত সোমবার দুপুরে রিয়া খাতুনের মা রুনা খাতুন বিয়ের কাবিনের কপি হাতে বাগোয়ান গ্রামে পৌঁছান। তিনি তার মেয়ে রিয়া খাতুনের বিয়ের স্বীকৃতি চান এবং মেয়ের সাথে ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন। অন্যথায় তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান।

বিয়ের অন্যতম স্বাক্ষী (ছেলে পক্ষের) বাগোয়ান গ্রামের মিয়ার শেখের ছেলে শাহান শেখ বলেন, রিয়া খাতুন ও তাহের খানের বিয়ে হয়েছে। তাদের বিয়ে বৈধ।

এদিকে বৈধ বিয়ে জেনেও ঘরের বউকে মেনে না নিয়ে মারধর করে বাড়ি তাড়িয়ে দেয়া প্রচেষ্টায় গ্রামবাসী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল জানান, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে আমরা সে চেষ্টা করছি। রিয়া ও তার মা সোমবার রাতে বাগোয়ান গ্রামে তাহের খানদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তারা দু’জনই রাতের খাবার খেয়েছেন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুজিবনগর থানা পুলিশের সহযোগিতায় উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। রিয়া ও তার মায়ের দাবি অনুযায়ী এখন থেকে উভয় পরিবারের মধ্যে কথা চলবে। যেহেতু রিয়ার স্বামী তাহের খান প্রবাসে আছেন সেহেতু এখন রিয়া শ^শুর বাড়িতে থাকবেন না।

Comments (0)
Add Comment