স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে চলছে সরকারি গাছ কাটার মহোৎসব

আলমডাঙ্গার জিকে প্রকল্পের দুটি সেচ খালের পাড় থেকে গাছ কেটে সাবাড়

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: সকাল থেকেই কুড়াল-করাত দিয়ে একের পর এক সরকারি ক্যানেলের বড় বড় গাছ কাটছিলো ১০-১২ জন লোক। আরও কয়েকজন অপেক্ষায় ছিলেন। গাছ মাটিতে পড়তেই করাত দিয়ে তা খন্ড খন্ড করে ট্রলিতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছোট ছোট ডাল-পালাগুলো পাশের বাড়ির নারীরা টেনে টেনে বাড়িতে নিচ্ছেন। এ কাজে অংশ নিয়েছে বাড়ির ছেলে-মেয়েরাও। কদিন ধরেই ক্যানেলের ওপর ও পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় গাছ কাটতে শুরু করে ওই এলাকার চিহ্নিত কয়েকজন। অতি গুরুত্বপূর্ণ গাছগুলো কাটা হচ্ছে আলমডাঙ্গার জামজামির খামারপাড়ার জিকে প্রকল্পের দুটি সেচ খালের পাড় থেকে। গতকাল রোববার দুপুরে এ প্রতিনিধি জামজামির মূল জিকে ক্যানেল থেকে বের হওয়া ইরিগেশন খালের আঁকাবাঁকা পথ ধরে গাছ নিধনের মহোৎসবস্থলে হাজির হন। গাছখেকোরা কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই করাত চালিয়ে একেকটি গাছ মাটিতে ফেলে দিচ্ছিলো। খামারপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনটি মেহগনি গাছ কাটতে পেরেছেন। রীতিমত লেবার নিয়ে গাছ কাটছেন তিনি। সামনে এগোতেই চোখে পড়লো মধুপুর গ্রামের হুমায়ুন নামের একজন একটি বড় বেলগাছ কেটে মাটিতে ফেলে ডালপালা ঝুড়ছেন। হুমায়ুনের সাথে অংশ নিয়েছেন তার স্ত্রী ও ছেলেরা। হুমায়ুন থেকে আরেকটু দূরে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বড়সড় একটি গাছ কাটছেন সেকেন্দার আলী। সেকেন্দার আলী একদিন আগে আরো দুটি গাছ কেটে নিয়েছেন। তার একটু পরেই আরো একটি মেহগনি গাছ কেটে খন্ড খন্ড করছেন একই গ্রামের মন্টু মিয়া। মন্টু মিয়াও লেবার নিয়ে আটঘাট বেঁধে গাছ কাটছেন। এ সময় সাংবাদিক দেখে  বেশকিছু লোকও ভিড় জমিয়েছেন। স্থানীয়রা জানালেন, বেশ কয়েকদিন ধরে মধুপুর গ্রামের সোহরাব আলী প্রায় অর্ধ শতাধিক গাছ কেটে নেয়ার পর অনেকেই গাছ কাটতে উৎসাহিত হয়। গাছ কাটতে কে নির্দেশ দিয়েছেন জানতে চাইলে মন্টু মিয়া রাখঢাক না রেখেই জানালেন ‘ওয়াপদার গেটম্যান জামিরুল’ গাছ কেটে নিতে বলেছেন।

এ সময় পাশের জঙ্গলের ওপাশ থেকে জামিরুল বেরিয়ে আসেন সামনের জটলায়। তার সাথে বেরিয়ে আসেন আরেক হুকুমদাতা ওয়াপদার পানি ব্যবস্থাপনার স্থানীয় সভাপতি মধুপরের গোলাপ হোসেন। বখরা নিয়ে গাছ কাটতে এ দুজনই নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয়দের। এ সময়ও ক্যানেলের এপাড় ওপাড়ে করাতের ধারে গাছকাটা চলছিলো। ঠিক ওই সময়ই পাশের ঝোঁপ থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ওয়াপদার ওভারসিয়ার হাফিজুর রহমান। গাছ কাটা দেখে তিনি কিছুটা বিব্রত হওয়ার ভান করলেন সাংবাদিকদের সামনে। তবে গাছ কাটা অন্যায় হচ্ছে বলে তিনি এক পর্যায়ে স্বীকার করলেও স্থানীয়রা জানান, হাফিজুর সকাল ১০টার পর থেকেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন। তার সামনেই গাছ কাটার মহোৎসব চলছে।

গেটম্যান জামিরুল ইসমলাম ও সেচ খালের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির স্থানীয় সভাপতি গোলাপ হোসেন সরাসরি বললেন, ওয়াপদার উপসহারী প্রকৌশলী বকুল আহমেদ গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে বকুল আহমেদের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ক্যানেলের পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে ক্যানেলের ভেতর পাশের আগাছা পরিস্কার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গাছ কাটার কথা বলা হয়নি। তিনি আরো জানান, গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে।

Comments (0)
Add Comment