হতদরিদ্রদের হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে চম্পট প্রতারকচক্র

ভালাইপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় এক শ্রেণির প্রতারকচক্রের আবির্ভাব হয়েছে। বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা’র মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। সোনালী ব্যাংক গোকুলখালী শাখার কর্মচারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতে চক্রটি। তাদের ফাঁদে পড়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে প্রতিকারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন। এমনই ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের ভালাইপুর ও আলুকদিয়া ইউনিয়নের চকপাড়ায়।
ভালাইপুর হঠাৎপাড়ার মৃত আব্দুল জলিলের স্ত্রী বৃদ্ধা হালিমা বেগম ও ইমাম আলীর ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিলনের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, গত শনিবার দুপুরে গোকুলখালী সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে বয়স্ক ভাতাভোগী হতদরিদ্র হালিমা বেগমের বাড়িতে যায় কয়েকজন ব্যক্তি। বয়স্ক ভাতা পেয়েছেন কি না হালিমা বেগমের কাছে জানতে চেয়ে তারা হালিমা বেগমকে মোটা অংকের টাকা পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬ হাজার টাকা দাবি করে। আগামীকাল (রোববার) সোনালী ব্যাংক গোকুলখালী শাখায় গিয়ে ২৪ হাজার টাকা তুলে নেয়ারও কথা বলে চক্রটি। একইসাথে বৃদ্ধা হালিমা বেগমের নাতি ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিলন হোসেনের বাড়িতে যায় প্রতারক চক্রটি। তারা মিলনের বিস্তারিত নাম-পরিচয় জানতে চেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পায় কি না জিজ্ঞাসা করে। যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পেয়ে থাকে তাহলে তাকেও আগামীকাল (রোববার) ব্যাংকে নিয়ে যাবেন। তাকেও ২৪ হাজার টাকা দেয়া হবে।
পরবর্তীতে চক্রটি একটি পাশ বই বের করে বৃদ্ধা হালিমা বেগম ও তার নাতি ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিলন হোসেনের নাম ঠিকানা লিখে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়। গতকাল রোববার সোনালী ব্যাংক গোকুলখালী শাখায় গিয়ে দুজন ৪৮ হাজার টাকা তুলবেন জানিয়ে তাদের কাছে নগদ ১২ হাজার টাকা দাবি করে। সম্পূর্ণ টাকা জোগাড় করতে না পারায় তাদের কাছ থেকে ৭ হাজার ৫শ’ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।
বৃদ্ধা হালিমা বেগম আরও বলেন, তাদের কথামতো আমার কাছে থাকা বয়স্ক ভাতা’র পাওয়া ৩ হাজার টাকা ও ছেলের বৌদের কাছ থেকে টাকা ধার করে ৭ হাজার ৫শ’ টাকা দিই। ব্যাংক থেকে ৪৮ হাজার টাকা তোলার পর বাকি ৪ হাজার ৫শ’ টাকা গোপনে পরিশোধ করে দেয়ার কথা বলে তারা। তিনি আরও বলেন, ৪ জন প্রতারকের মধ্যে দুজন আমার বাড়িতে আসে। আর দুজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো।
এদিকে, গতকাল রোববার আলুকদিয়া ইউনিয়নের আলুকদিয়া চকপাড়ার আয়ুব আলীর স্ত্রী সাহিদা খাতুনের বাড়িতে যায় চক্রটি। ভাতা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে সাহিদা খাতুনের কাছ থেকেও নগদ ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এর আগেও আলমডাঙ্গার গোবিন্দপুর গ্রামে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে প্রতারক চক্র।
প্রতারক চক্রের দেয়া পাশ বইয়ে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কতৃক অনুমোদিত বিদেশী সংস্থা সৌদিআরব সিসিডিবি অনুদানের তালিকা’ লেখা রয়েছে। একইসাথে ২০৮৬৫১ রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী অসহায় ব্যক্তির তালিকা’ উল্লেখ রয়েছে। ওয়ার্ড প্রতি ৬ জন অসহায় প্রতিবন্ধী তালিকার কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশের যেকোন জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে টাকা উঠানো যাবে এসব লেখা থাকার পাশাপাশি রয়েছে ওয়াল্ডভিশন বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত জেস ফাউন্ডেশন। পাশ বইয়ে উল্লিখিত ০১৮৬৩৩৯২০১৬ ও ০১৯১৭১৪৫৭২১ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আফাজ উদ্দীন বলেন, এরা একটি প্রতারক চক্র। এর আগেও চক্রটি আলমডাঙ্গা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখেছি প্রতারক চক্রটি সরকারের বিভিন্ন দফতরের নাম ভাঙিয়ে বা বিভিন্ন সংস্থার নামে পাশ বই তৈরি করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে সটকে পড়ে। আমরা তদন্তপূর্বক যতদূর বুঝেছি, প্রতারক চক্রের সদস্যরা অন্য জেলা থেকে এসে হুট করে কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। ফলে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে।

Comments (0)
Add Comment