এ বছর প্রলম্বিত হবে বজ্রপাতের মৌসুম

মে-জুলাই সাংঘাতিকভাবে বজ্রপাত বাড়তে পারে : ড. ফারুক

স্টাফ রিপোর্টার: ঘন কালো মেঘে আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেখান থেকে হঠাৎ করেই তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ। এই বজ্রমেঘ থেকেই হচ্ছে বজ্রপাত। আর সেই বজ্রপাতে প্রায়শই প্রাণহানির শিকার হচ্ছেন দেশের মানুষ। এদের অধিকাংশই হাওরাঞ্চলের অধিবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কয়েকটি অংশে এবং নেপালেও বজ্রপাত হয়। তবে এসব দেশের তুলনায় ভৌগলিক কারনে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি। তাপমাত্রার সঙ্গে বজ্রপাত বৃদ্ধির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তবে এ বছর বজ্রপাতের মৌসুম প্রলম্বিত হবে বলে মনে করছেন এ বিষয় নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ ফারুক। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, গত বছরের মত এখনো সেভাবে তাপমাত্রা বাড়েনি। সাধারণত এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরে বজ্রপাতের মৌসুম শেষ হত। আমার অভিজ্ঞতা বলছে এবার বজ্রপাতের মৌসুম প্রলম্বিত হবে। অর্থাৎ মে মাসে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি গিয়ে শেষ হতে পারে। আর মে, জুন ও জুলাই মাসে বজ্রপাতের পরিমান সাংঘাতিকভাবে বাড়তে পারে। ড. ফারুক বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত যারা বজ্রপাতে মারা গেছেন তাদের ৮৭ ভাগই সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের মানুষ। সেজন্য এখন যেহেতু ২/১ দিন পরপর কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে সে কারনে কৃষকদের একটু সাবধানে থাকা দরকার, যখন তারা খোলা মাঠে থাকেন। তিনি বলেন, বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানার জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাডার স্থাপন করেছে। কিন্তু তাতে প্রাণহানি কমেনি। অথচ হাওরাঞ্চলে ১/২ কিলোমিটার পরপর কিছু পাকা ঘর তৈরি করে দিলে কৃষকরা সেখানে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে যেতে পারেন।
কেন বজ্রপাত: শীত চলে যাওয়ার পর বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে অর্থাৎ দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে গরম বাতাস এসে উত্তর-পূর্বাংশে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে যে ভারি বাতাস থাকে তার সঙ্গে মিশ্রণ ঘটে সেখানে প্রচুর বজ্রপাত হয়। এই সময়টাতে যেদিন পচুর গরম বিশেষ করে প্রচুর সূর্যালোক থাকে এবং দিনের তাপমাত্রা বেড়ে আদ্রতা কমে যায় তখনই হঠাৎ করে বজ্রমেঘ তৈরি হয়ে বজ্রপাত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে হিমালয়, সেখান থেকে আসছে ঠা-া বাতাস। গরম ও শীতল এই দুটি বাতাসের সংমিশ্রণে তৈরি হয় বজ্রমেঘের। এরকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, যখন আকাশে প্রচুর মেঘ জমে আর তা ভূপৃষ্ঠের খুব নিকটে চলে আসে তখনই বজ্রপাতের ঘটনাটা ঘটে। আকাশ থেকে মাটিতে ছাড়াও আকাশ থেকে আকাশে বা মেঘ থেকে মেঘের মধ্যেও বজ্রপাত হয়ে থাকে। বজ্রপাতকে ২০১৬ সালে জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত এক দশকে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ২ হাজার ৮১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন। চলতি এপ্রিল মাসের ২০ দিনে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭ ব্যক্তি। বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরাম এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

Comments (0)
Add Comment