হাসি নেই খামারিদের মুখে : অনলাইনে গরু-ছাগল কেনাবেচার দিকে ঝুঁকছে মানুষ

বখতিয়ার হোসেন বকুল : ঈদকে সামনে রেখে পশুহাটে বিপুল পরিমাণ গরু-ছাগলের আমদানি ঘটলেও বাইরের ব্যাপারি না আসায় অনেকটা কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে খামারিদের। দাম কম হওয়ায় হাসি নেই স্থানীয় খামারিদের মুখে। তবে অন লাইনে গরু-ছাগল কেনাবেচায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
গতকাল সোমবার ডুগডুগী পশুহাট সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী বাজারের পশুহাটটিই জেলার সবচেয়ে বড় পশুহাট। দামুড়হুদা-দর্শনা সড়কের ধারেই প্রতি সোমবার বসে ওই পশুরহাট। ঢাকাসহ সারাদেশের বড় বড় গরুর ব্যাপারিরা আসেন ওই ডুগডুগী পশুহাটে। কিন্ত এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে ঢাকাসহ বহিরাগত ব্যাপারিদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকজন বাইরের ব্যাপারি হাটে এলেও দাম হাকছেন অনেকটাই কম। ফলে মোটা অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় খামারিরা। স্থানীয় খামারি দামুড়হুদা জুড়ানপুরের মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর খামারে ৫টি এঁড়ে গরু রয়েছে। ৫টির মধ্যে একটি হাটে এনেছি। আমি ৮০ হাজার চেয়েছি। ব্যাপারিরা ৭০ হাজার বলেছে। দাম অন্যান্য বারের তুলনায় একটু কম। তবে এখনও সময় আছে। স্থানীয় ব্যাপারি দামুড়হুদা হোগলডাঙ্গার মিলন জানান, গ্রাম থেকে ১৬ হাজার টাকা মন দরে গরু কেনা হয়েছে। হাটে দাম অনেকটাই কম বলছে। স্থানীয় ডুগডুগির হাবিবুর রহমান জানান, বাইরের ব্যাপারি না আসায় দাম একটু কম। তবে ঈদের আগে আরও দুইটি হাট আছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়। এদিকে অনলাইনে গরু-ছাগল কেনাবেচায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে বলে জানিয়েছেন দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান। তিনি জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম পশুর স্বাস্থ্য পটরীক্ষার কাজ শুরু করেছে। দামুড়হুদা উপজেলায় মোট খামারির সংখ্যা ১৭৫৬। খামারে গরুর সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার এবং ছাগলের সংখ্যা ২২ হাজারেরও বেশী। হাট এলাকায় মাইকিংসহ লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। হাটে আসার পর কোনো পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অসুস্থ পশু হাটে ঢুকতে বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মহোদয় অনলাইন পশুহাট চুয়াডাঙ্গা নাম দিয়ে একটি ফেসবুক পেইজ খুলেছেন। এছাড়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার চুয়াডাঙ্গা অনলাইন পশুর হাট নাম দিয়ে আরও একটি ফেসবুক পেইজ খুলেছেন। উপরোক্ত ২টি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় চলছে। এ ছাড়া যে সকল খামারি ও ব্যবসায়ীগন চুয়াডাঙ্গা থেকে ট্রেনযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে কোরবানির পশু পরিবহন করতে চান, তাদের অতিসত্বর স্টেশন মাস্টার চুয়াডাঙ্গা/জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চুয়াডাঙ্গা/উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দামুড়হুদার সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, অনলাইনে পশু কেনাবেচা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। তবে ঢাকা আশুলিয়ায় ২ দিনে প্রায় দুই শতাধিক গরু বিক্রি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ দিকে পশুহাট এলাকায় হাট মালিকের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, পকেটমাররোধে নিরাপত্তার চাঁদরে মোড়ানো হয়েছে পুরো হাটএলাকা। বসানো হয়েছে ১৬টি সিসি ক্যামেরা। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, পকেটমারসহ প্রতারকচক্রের অপতৎপরতা বেড়ে যায় কয়েকগুন। সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র চেতনানাশক মেডিসিনের সাহায্যে বেহুশ করে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। ডুগডুগী পশুহাট ইজাদার সোহরাব হোসেন বলেন, হাটে আমদানী ভালো হলেও বেচাবিক্রি কম। ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরণের প্রতারকচক্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ব্যাপারিরা যাতে নিরাপদে বেচাকেনা করতে পারে সেদিক লক্ষ্য রেখেই সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কুষ্টিয়ার পশুর হাটে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যে কুষ্টিয়ার সর্ববৃহৎ পশুর হাট সদর উপজেলার আলামপুর বালিয়াপাড়া মাঠে শনিবার সাপ্তাহিক হাটে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কারও মুখে মাস্ক নেই। জেলায় প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটিয়ে হাটের আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তাদের দাবি, হাটে অন্তত পক্ষে প্রশাসনের নজরদারি থাকা দরকার ছিলো। তবে হাটে হাজার হাজার পশু উঠলেও ক্রেতাদের ভিড় তেমন একটা নেই। কুষ্টিয়ার পশু দেশে চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রেখেছে। কোরবানির ঈদের আগে এখানকার হাট-বাজার থেকে ব্যাপারীরা গরু কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। এবার সেই সংখ্যা অনেক কম। জেলায় বড় পশুর হাট রয়েছে ১২টি। এসব হাট ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট ছোট হাট-বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-ছাগল নিয়ে আসছেন খামারিরা। শনিবার জেলার সবচেয়ে বড় হাট বসেছিল সদর উপজেলার আলামপুরের বালিয়াপাড়া মাঠে। সাপ্তাহিক এই হাটে গ্রামের হাজার হাজার কৃষক গাদাগাদি করে পশু বিক্রি করতে আসেন। সেখানে ছিলো না সামাজিক দূরত্ব, মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। কারও মুখে ছিলো না মাস্ক। অথচ কুষ্টিয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। শুধু সদর উপজেলায় গড়ে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন ৩০ জন। সোমবার (১২ জুলাই) জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬। সবমিলে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁই ছুঁই। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটিয়ে পশু হাটের আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকরা কয়েক হাজার গরু নিয়ে হাটে এলেও কেনাবেচা একদম কম ছিলো। ক্রেতা না থাকায় অনেক কম দামে গরু বিক্রি করতে হয়েছে খামারিদের। করোনা মহামারিতে গরুর দাম না পেয়ে দিশেহারা কৃষকরা। তারা মোটা অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা করছেন। কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, হাটে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ছিলো। অনেক মানুষের সমাগম হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন ছিলো। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Comments (0)
Add Comment