দর্শনা মাদরাসায় ছাত্রীর মৃত্যু : দোলার বোবাকান্না পৌঁছুয়নি কারো কানে

চোর ধরতে চালপড়া!

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিটি মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যা ঘটে থাকে স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিকভাবে। স্বাভাবিক মৃত্যু যতোটা না বেদনার অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নেয়াটা সকলের জন্যই কষ্টদায়ক। তার ওপর সন্তানের লাশ বাবার কাঁধে সেটা কতোটা বেদনাদায়ক তা শুধু ওই মা-বাবারাই উপলব্ধি করে থাকে। দর্শনা হল্টস্টেশন তেতুলতলায় মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসায় ৩য় শ্রেণির ছাত্রী দোলার অস্বাভাবিক মৃত্যু তেমনি একটি ঘটনা। দোলার বোবাকান্না পৌঁছুয়নি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কানে। দোলার পরিবারের অভিযোগ না থাকায় রহস্যজনকই রয়ে গেলে তার মৃত্যু। চোর ধরতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের ছাত্রীদের চালপড়া খাওয়ানোটা কতোটা যৌক্তিক?
মেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুন্দিপুর গ্রামের দুলাল হোসেন মেয়ে আফসানা দোলাকে গত ২০ অক্টোবর গ্রামের স্কুল থেকে নিয়ে এসে ভর্তি করান দর্শনা হল্টস্টেশনের তেতুলতলার নিকট অবস্থিত মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসায়। করোনার কারণে জীবনের ঝুঁকি এড়াতে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। মাস দুয়েক আগে প্রাথমিকভাবে কওমি মাদরাসায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার নির্দেশনা দেয় সরকার। তারই আলোকে মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসা খুলে বসেন কর্তৃপক্ষ। গত রোববার বাড়ি থেকে মাদরাসায় আসে দোলা। মাদরাসায় আসার পরপরই বৃহস্পতিবার তার এক আত্মীয়ের সুন্নাতে খাতনার অনুষ্ঠানের দিন পড়ে যায়। আগের দিন বুধবার দোলার বাবার অনুরোধে তারাই এক নিকটজন দোলাকে মাদরাসা থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পড়ার কারণ দেখিয়ে ছাপছাপ জানিয়ে দেয় দোলাকে ছুটি দেয়া হবে না। কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় দোলা। অনুষ্ঠানের দিন সকালে নিয়ে যাবার শান্তনা দিয়ে ফিরে যায় দোলার বাবার পাঠানো মানুষটি। বাড়িতে না যেতে পেরে বোবা কান্না থামে না দোলার। আর সে কান্না কোনোভাবেই পৌঁছুয়নি না মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কানে। সেদিনের সে কান্নার ভাষা বোঝার মতো একজন মানুষও ছিলো না মাদরাসায়। সকালে দোলা ঠিকই বাড়িতে ফেরে তবে লাশ হয়ে। এদিকে একটি সূত্রজানায়, মাদরাসার অভ্যন্তরে প্রায় সময় ঘটে চুরির ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় ২ নভেম্বর এক শিক্ষার্থীর চুরি হয় ২ হাজার ৭শ টাকা। ঠিক তার পরের দিন আর এক শিক্ষার্থীর চুরি হয় একটি মোবাইল। একের পর চুরির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হয় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। চোর ধরতে ব্যর্থ হলেও চোর শনাক্ত করতে উপস্থিত ছাত্রীদের মাদরাসা কর্তৃপক্ষ খাওয়ান চালপড়া। এ কাজ করেও চোর শনাক্ত করণে ব্যর্থ হন তারা। প্রশ্ন উঠেছে চোর সন্দেহে ঝাঁড়ফুক কিংবা চালপড়া খাওয়ানো কতোটা যৌক্তিক? কারণ সবারই একটি আত্মসম্মান বোধ আছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে দর্শনা রেল বাজার জামে মসজিদের বিতর্কিত ইমাম মুফতি গোলাম কিবরিয়া দর্শনা হল্টস্টেশনের একটি বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদরাসা। মাদরাসার বয়স ৫ বছর ধরধর হলেও আজ অবধি ব্যবস্থাপনা পরিষদ যেমন গঠন হয়নি, তেমনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রেও রয়েছে ঘাটতি। নিজে অধ্যক্ষ, স্ত্রী, মেয়ে ও জামাতা মিলেই শিক্ষকতা করেন ওই মাদরাসায়। ১ম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ক্লাস খুলে বসেন। বর্তমানে মাদরাসায় ২শ জন শিক্ষার্থী থাকলেও নিয়মিত ক্লাস করে থাকে ১৭৫ জন। এদের মধ্যে আবাসিকে থাকে ১২০ জন। মাত্র দুটি কক্ষে ১২০ জন শিক্ষার্থী ঠাসাঠাসি করে অনেকটাই হাজত বাসের মতো করে থাকতে হয় মেয়েদের। গতবুধবার রাতে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আফসানা দোলার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে।

Comments (0)
Add Comment