চুয়াডাঙ্গা : অসুস্থতার কথা বলে ডেকে নিয়ে মায়ের হাতে তুলে দেয়া হলো মেয়ের লাশ

বেগমপুর প্রতিনিধি: আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আপনারা হাসপাতালে চলে আসেন। বালিয়াকান্দি গ্রামের জামাই সাইদুরের ফোন পেয়ে পড়ি কি মরি করে হাসপাতালে ছুটে যান মা বেগমপুর রনগোহাইল গ্রামের ছেরে বেগম। হাসপাতালের গেটে পৌঁছুতেই দেখেন ভ্যানে করে মেয়ের লাশ বের হচ্ছে। লাশ বালিয়াকান্দি গ্রামে নিয়ে যাবার কথা বলে পথিমধ্যে ডিঙ্গেদহ বাজারে এসে মেয়ের লাশ তুলে দেয়া হয় মায়ের হাতে। অবুঝ মা মেয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরে। মেয়ের পরিবারের অভিযোগ রুনার ওপর শশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনা আড়াল করতে তাকে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নেয়া হয়। আজ সোমবার রুনার লাশের ময়নাতদন্ত হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের রনগোহাইল গ্রামের মগরেব মিস্ত্রির মেয়ে রুমানা খাতুনের ২০০২ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কুতুবপুর ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি গ্রামের স্কুলপাড়ার ওমর সর্দ্দারের ছেলে সাইদুর রহমানের সাথে। বিয়ের পর তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি পুত্রসন্তান। আবারও রুনা অন্তঃসত্ত্বা। গতকাল রোববার রুনা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বামীর বাড়ির লোকজন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ভর্তি করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক অন্তঃসত্ত্বা রোগী হিসেবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হাসপাতালের বেডে পাঠানোর সময় তার মৃত্যু হয়। রুনার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে জানানো হয় ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বার রুনার ওপর শশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন চালিয়েছে। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে রুনাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রুনার মৃত্যুর পর আমাদেরকে খবর দেয়া হয় হাসপাতালে যাবার জন্য। পড়ি কি মরি করে রুনার মা তার মামী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতালের গেটে পৌঁছুতেই দেখেন ভ্যানে করে রুনার লাশ বের করা হচ্ছে। রুনার মা ও মামীকে জানানো হয় ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুনা শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। সহজসরল মা ও মামী রুনার লাশের ভ্যানের সাথে বালিয়াকান্দিতে রওনা দেয়। পথিমধ্যে ডিঙ্গেদহ বাজারে এসে পৌঁছুলে রুনার লাশ তার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বলা হয় বাড়িতে নিয়ে যান। রুনার লাশ রনগোহাইল পৌঁছুলে বালিয়াকান্দি থেকে বিভিন্ন ফোন আসতে থাকে রুনার মৃত্যু নিয়ে। রুনার পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ করা হলে রাত ৮টার দিকে হিজলগাড়ি ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই তাপস সরকার রনগোহাইল গ্রামে যান এবং রুনার মা বাবার অভিযোগ শোনেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডা. সাজিদ হাসান বলেন, পেগনেট জনিত কারণে বাড়িতেই রুনার খিচুনি ওঠে। হাসপাতালে এনে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রাজশাহীতে রেফার করা হবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রোগীকে বেডে নিয়ে যাবার পরপরই তার মৃত্যু হয়। যদি পরিবারের অভিযোগ থাকে লাশের ময়নাতদন্ত করলেই সঠিকতা জানা যাবে। এ ব্যাপারে এসআই তাপস সরকার বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে রুনার মৃত্যু স্বাভাবিক না। তবে সত্য জানতে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন আছে। আজ সোমবার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

Comments (0)
Add Comment