দামুড়হুদায় বেড়ে উঠছে মরুর প্রাণী দুম্বা

তাছির আহমেদ: মরুর প্রাণী দুম্বা। সাধারণত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে যার বেশি বসবাস। সেই দুম্বার খামার গড়ে তোলা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায়। ছোট্ট কৃত্রিম পরিসরে মরুভূমি তৈরি করে লালন-পালন করা হচ্ছে এসব দুম্বা। দুম্বা পালনে এলাকার আওহাওয়া অনুকূল হওয়ায় দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

জানা গেছে, ঢাকার সাদেক এগ্রো থেকে আয়োশি ও রেড মাসাই জাতের ৬টি দুম্বা ক্রয় করে এনে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে লালন-পালন শুরু করে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড ক্যাপাসিটি-সিডিসি, ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত খামার। দামুড়হুদার কোষাঘাটা গ্রামে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে অবস্থিত এই খামারে দুম্বা ছাড়াও বিভিন্ন পশুপাখি লালন-পালন করা হয়ে থাকে। একটি মর্দা এবং ৫টি মাদি দুম্বায় মোট খরচ হয় ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে ৪টি দুম্বা শাবক। সুস্থতার সাথে দিনদিন বেড়ে উঠছে এসব শাবক। সবুজ ঘাস, খড়, গম, ভুট্টা, ছোলা, বুটের ভুসি খেয়েই প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে এসকল দুম্বা। এলাকায় বিরাজ করছে দুম্বার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।

এ খামার সহায়ক মনোয়ার হোসেন বলেন, দুম্বা মরুভূমি পছন্দ করে। তাই এখানে ছোট্ট পরিসরে কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাদি দুম্বাগুলো ৪টি বাচ্চা দিয়েছে। সুস্থতার সাথে দিনদিন বেড়ে উঠেছে তারা। মোট দুম্বার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০টি। গমের ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটাগুড়, খড়, মাল্টিভিটামিনসহ বিভিন্ন খাদ্য একত্রে মিশিয়ে তিন বেলা খাবার দেয়া হয় তাদের। এছাড়াও সবুজ ঘাস, কাঁঠাল পাতা তার পছন্দ। ছাগল ভেড়ার মতোই লালন-পালন করা হয় এসকল দুম্বা। আশপাশ এলাকার মানুষ এ প্রাণিকে একনজর দেখতে প্রায়ই ভিড় করে।

এ খামার সহকারী সমন্বয়কারী ডা. তুহিন মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় দুম্বার খামার নতুন। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে কমবেশি যারাই দুম্বা পালন করছেন, কেউই লোকসানে নেই। কারণ ছাগল ভেড়ার মতোই দুম্বা লালন-পালন করা যায়। বংশ বৃদ্ধি করে ছাগল ভেড়ার মতোই। আবহাওয়া, খাবার, চিকিৎসাতেও সমস্যা নেই। তিন থেকে চার বছরে পরিণত হয় একটি পূর্ণবয়স্ক দুম্বা। তখন ওজন হয় ১০০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত। দাম হতে পারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। কোরবানির সময় সৃষ্টি হয় প্রচুর চাহিদা। তাছাড়াও দুম্বার মাংস খুব সুস্বাদু হওয়ায় কেজি প্রতি বিক্রি হয়ে থাকে ১৫শ টাকা। নোংরা, অপরিষ্কার জায়গায় দুম্বা রাখলে ম্যাগোস ফর্ম করে। একটু সতর্ক থাকলে এই রোগ এড়ানো সম্ভব।

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, দুম্বা ও ভেড়া কাছাকাছি প্রাণি। দুম্বা মরুর প্রাণি হলেও এটি একটি সহনশীল প্রাণি। দেখতে ভেড়ার মতো তবে পেছনের অংশ ভারি। ভেড়ার মতোই দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। মাংস উৎপাদনে এগিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে। অর্থনীতিক দিক দিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে দুম্বা পালন লাভজনক। কোরবাণীর সময় থাকে প্রচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। আমাদের এই পরিবেশে দুম্বা পালনে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাই এই খাতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

এ দুম্বা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। টিভিতে দেখেছি মরু অঞ্চলের দুম্বা। এখন দেখি নিজ এলাকায়। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার সন্তান ইসমাঈল (আ.) কে কোরবানি দিলে সেস্থানে কোরবানি হয়ে যায় দুম্বা। তাই ধর্মানুরাগী মুসলমানদের অনেকে চান দুম্বা কোরবানি দিতে। দেশে কোরবাণীকৃত দুম্বার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। দেশে দুম্বা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে কমবে আমদানি এবং পাওয়া যাবে সূলভে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি সহায়তা। সরকারিভাবে ব্যাংক ঋণ ও কারিগরি সহায়তার ব্যবস্থা পেলে দুম্বা পালন বেকার জনগোষ্ঠীর অর্থনীতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।

Comments (0)
Add Comment