মোটা অংকের বেতনে চাকরির প্রলোভন,  কেঁদে বুক ভাসছে সৌদিতে পাচার গাংনীর চারজনের

গাংনী প্রতিনিধি: ভালো চাকরি আর মোটা অংকের বেতনের প্রলোভনে মেহেরপুরের গাংনীর কয়েকজনকে সৌদি আরবে পাঠায় আদম ব্যাপারী আবুল হোসেন। সৌদি গিয়ে চাকরি তো দূরে থাকা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটকের ভয়ে গোপনে ঘরবন্দী হয়ে আছেন তারা। সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) দেয়ার পরিবর্তে তাদের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করেছেন আদম ব্যাপারী আবুল। ফলে পুলিশের হাতে আটকের আশঙ্কায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় সময় পার করছেন হতভাগা এসব প্রবাসীরা। বেশিরভাগ সময় কান্নাকাটি করে সময় পার হচ্ছে রেমিটেন্স পাঠাতে যাওয়া এসব মানুষের। সহায় সম্বল বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি দেয়া মানুষগুলোর সরলতার সুযোগ নিয়ে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলার দিঘলকান্দি গুচ্ছ গ্রামের টোকন আলী, শানঘাট গ্রামের আকরাম হোসেন, শিশিরপাড়া গ্রামের ওসমান আলী ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর গ্রামের আশরাফুর ইসলাম মাস চারেক আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। শর্তানুযায়ী তিন মাসের ভিসার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাদেরকে কোম্পানিতে আকামা  দেয়ার কথা ছিলো। সৌদি রাজধানী রিয়াদের কাছাকাছি একটি স্থানে একটি ঘরে তাদেরকে থাকতে দেয়া হয়। আকামা ও অন্যান্য কাগজপত্র দেয়ার আশা দিয়ে কয়েকদিন পরেই তাদের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করে আদম ব্যাপারী আবুল হোসেন। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও কোনো কুল কিনারা হয়নি এই চারজনের। এরই মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেশেও ফিরতে পারছেন না তারা।

শিশিরপাড়া গ্রামের আবুল হোসেন নামের এক আদম ব্যাপারীকে তারা জনপ্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন। ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত মেসার্স প্যাটরিয়ট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি এজেন্সি তাদের সৌদি গমনের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করে। আদম ব্যাপারী আবুল হোসেন ও পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের টিপু মিয়া তাদেরকে এই এজেন্সিতে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে টোকন আলীসহ ওই চারজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, সম্পদ বিক্রি আর ঋণ করে আমরা আবুলকে টাকা দিয়ে এখানে এসেছি। এখন খাওয়ার মতো টাকাও নেই। বাড়ি থেকে মাঝে মাঝে কিছু টাকা পাঠাচ্ছে। তাই দিয়ে কোনোমতে চলছে।

ভিসা আর পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তারা বলেন, এখন ভিসা পেতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাদের পক্ষে যা জোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখানে আকামা ছাড়া কেউ কাজ দেয় না। অবৈধ বসবাসের ফলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবেই। তাই আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, সৌদী পুলিশ তাদের গ্রেফতার করলে নির্দিষ্ট মেয়াদে কারাভোগ করার পর দেশে পাঠিয়ে দেবে। একদিকে গ্রেফতারের ভয় অন্যদিকে ঋণের যন্ত্রণা। এসব ভেবে আরও অসহায় হয়ে পড়ছেন তারা।

তারা জানান, আদম ব্যাপারী আবুল হোসেন তাদের সাথে যোগাযোগ করছে না। পরিবারের লোকজনও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন চার প্রবাসী ও তাদের পরিবারের লোকজন।

এ বিষয়ে জানার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলো থেকে পাওয়া আবুলের একটি মোবাইল নম্বরে কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া গেছে।

সৌদিতে আটকে পড়া টোকন আলীর শ^শুর শিশিরপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নান জানান, গ্রামের পরিচিত মানুষ হিসেবে আবুলকেই বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু সে যে এভাবে পাচার করে দেবে তা জানা ছিলো না। জামাইকে বিদেশ পাঠিয়ে তিনি এখন চরম যন্ত্রণায় সময় পার করছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আবুলের নামে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে।

যোগাযোগ করা হলে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মানব পাচারের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যায়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করবে পুলিশ।

Comments (0)
Add Comment