স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরে বাণিজ্যমেলা হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয়েছে র্যাফেল ড্র’র নামে জুয়া। সার্কাসে রাত ১২টার পর শুরু হয় লেট নাইট শো। প্রদর্শনী করা হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য। যদিও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের দাবি, মেলায় অনৈতিক কিছু করা হলে বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে র্যাফেল ড্র’র কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় স্বপ্নচূড়া সংগঠনের উদ্যোগে গত ৫ জুন থেকে শুরু হয় মাসব্যাপী ‘দেশীয় শিল্প বাণিজ্য মেলা’। আদালতের এক নির্দেশনায় দেখা যায়, মেলার অনুমতি দেয়া হয় ২ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত। অথচ মেলা শুরু হয় ৫ জুন থেকে। যার মেয়াদ আগেই শেষ হয়েছে। তারপরও চলছে মেলা। মেলায় প্রবেশ মূল্য ধরা হয় জনপ্রতি ২০ টাকা করে। ভেতরে কিছু পণ্যের দোকান রয়েছে। সেখানে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। মেলার প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে টিকিট বিক্রি করছেন দুই ব্যক্তি। দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় সেখানেই। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সারা রাত চলে এ উন্মাদনা। প্যান্ডেলের সামনে লাকি কুপনের মঞ্চ। রাত ১১টায় শুরু হয় কুপনের ড্র। মেহেরপুর শহরের চক্রপাড়ার বাবু বলেন, ‘মোটরসাইকেল জেতার আশায় গেল কয়েকদিন ধরে টিকিট কিনে আসছি। প্রথমদিন দুটি, পরদিন থেকে ৫টি করে টিকিট কিনেছি। এটি একটি নেশার মতো। প্রতিদিনই টিকিট কিনতে মন চায়।’ দিন আনা দিন খাওয়ার বাবুর কষ্টার্জিত টাকা প্রতিদিনই চলে যাচ্ছে। তারপরও টিকিট না কিনে থাকা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজছাত্র বলেন, ‘রাতে লেটনাইট শো দেখার জন্য বাবা-মার চোখ ফাঁকি দিয়ে সার্কাসে যাচ্ছি। সাথে বন্ধুরাও যাচ্ছে। এমন অশ্লীল নৃত্যের সাথে সবাই মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এমনকি অন্য বন্ধুবান্ধবদের কাছে গল্প করলে তারাও এ সার্কাস দেখার জন্য আকৃষ্ট হচ্ছে। সেখানে তরুণ ছাত্র ও যুবকদেরই অনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে।’ মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল আমিন ধুমকেতু বলেন, ‘র্যাফেল ড্র মানেই অবৈধ। এটিও একটি জুয়া। সেটি যেভাবেই হোক না কেন। এটি বন্ধ না হলে সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হবে। অন্যদিকে সার্কাসের নামে যে লেটনাইট শো হচ্ছে। এতে যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে। এটি সমাজে ভাইরাসের মতো। একজনের মধ্যেমে আরেকজন ছড়াবে। এটি প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে ক।সতি হবে সমাজের। তাই প্রশাসনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে বাণিজ্য মেলার নামে লটারির জুয়ার ড্র ও সব প্রকার অশ্লীলতা বন্ধ হওয়া দরকার।’ ‘স্বপ্ন চূড়া’ সংগঠনের সভাপতি আশিকুর রহমান জানান, মেলা আদালতের অনুমতি নিয়েই করা হচ্ছে। র্যাফেল ড্র’র অনুমতি আছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে সার্কাসে অশ্লীল নৃত্যর ব্যাপারটি স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রথমদিন এটি হয়েছিল। পরদিন থেকে অশ্লীল নৃত্য আর হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম বলেন, মেলার ব্যাপারে উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনৈতিক কিছু হলে মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে আদালতের নির্দেশনায় মেলার সময়সীমার ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।