অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানিতে লগ্নিকারীদের অনেকেই ফেরত চাইছেন অর্থ : আলোচনায় কোম্পানির আসল বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার: অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানির নামে মোটা অংকের লাভে অর্থ লগ্নিকারীদের অনেকেই লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত নিতে শুরু করেছে। যেহেতু লগ্নি গ্রহণের বাণিজ্য সবে শুরু, সেহেতু লগ্নি ফেরত দিয়ে এজেন্টদের আত্মবিশ^াস বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর এরকমই খবর পাওয়া গেছে। একই সাথে আলোচনায় উঠে এসেছে কোটচাঁদপুরের হুন্ডি কাজল, ইউনিপে টুসহ বিগতদিনে এমএলএম কোম্পানির নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রসঙ্গ।
কোটচাঁদপুরের কাজল যখন টাকা নিয়ে মোটা অংকের লাভ তুলে দিতেন লগ্নিকারীদের হাতে, তখন কীভাবে এতো টাকা লাভ দেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও লোভের টোপের কাছে লগ্নিকারীদের প্রায় সকলে ছিলেন বিভোর। প্রথম দিকে লগ্নিকারী এবং কাজলের কিছু এজেন্ট লাভবান হলেও পরে কয়েকশ’ মানুষ কয়েক হাজার কোটি টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়েছেন। কাজলের নিকট লগ্নিকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তাদের অনেকে রাস্তায়ও নেমেছেন। লাভ হয়নি। এক পর্যায়ে হুন্ডি কাজলের প্রতারণা প্রায় সকলের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেকটা একই হারে লাভ দেখিয়ে ইউনিপে টু নাম অনলাইন ভিত্তিক একটি কোম্পানি চুয়াডাঙ্গাসহ সারা দেশে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নেয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ কোম্পানিও প্রথম দিকে এজেন্ট ও লগ্নিকারীদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে অনেকটা উম্মাদ করে তোলে। পরে প্রতারিতদের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক এজেন্ট অবশ্য সঞ্চিত থেকে গচ্চাও দিয়েছেন। ওই কোম্পানির হোতাদের শেষ পর্যন্ত হদিসই করা যায়নি। করা যায় না। যদিও ওই সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের এক ব্যবসায়ীর নাম আলোচনায় উঠে আসে। তিনিও প্রতারিত হয়েছেন বলে দায় এড়ান। ইউনিপে টু লাপাত্তা হওয়ার কয়েক বছরের মাথায় আবারও অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানি লোভনীয় লাভের কথা বলে অর্থ লগ্নি নেয়ার খবর চুয়াডাঙ্গায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকেই লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত নিতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ এজেন্টদের কথায় বিশ^াস অবিশ^াসের দোলাচালে পড়েছেন।
ঝিনাইদহের কাজল টাকা নিয়ে মোটা অংকের লাভ দিতেন। কীভাবে লাখে এক মাসে ১০/১২ হাজার টাকা লাভ দেন? এজেন্টদের অনেকেই বলতেন, হুন্ডি। লগ্নিকৃত টাকা হুন্ডি হয় বলেই এতো টাকা লাভ পাওয়া যায়। এ কারণে এক পর্যায়ে কাজলের নামের সাথে হুন্ডি যুক্ত হয়ে হুন্ডি কাজল হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে জানা যায়, কাজল লগ্নিকারীদের টাকা দিয়েই টাকার লাভ দিতেন। এক লাখ টাকা নিয়ে তা দিয়ে যদি এক টাকার ব্যবসাও না করা যায় তা হলে এক মাসে যদি ৫শ টাকাও কাউকে লাভ দিতে হয় তা হলে লগ্নিগৃহণকারীর কাধে কয়েক বছরের মধ্যেই কয়েক লাখ টাকার ঋণের বোঝা চেপে বসবে। অংকটা সহজ হলেও হুন্ডি কাজলের নিকট লগ্নিকারীদের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ছিলো না বলেই পরবর্তিতে তাদের প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। প্রথম দিকে কিছু এজেন্ট ও কিছু লগ্নিকারী কিছুটা লাভবান হলেও অনেকেরই গুনতে হয়েছে ক্ষতিপুরণ। অনলাইন ভিত্তিক লগ্নিগ্রহণকারীদের কি এমন বাণিজ্য যে, তিন লাখে মাসে এক লাখের বেশি লাভ দেবে? সঙ্গত প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই উঠে এসেছে ইউনিপে টু নামের অনলাইন ভিত্তিক প্রতারণার চিত্র। তাছাড়া অংকের একটি সূত্রের ওপর ভর করে ১০/১২ বছর আগে গড়ে তোলা নানা নামের এমএলএম কোম্পানিও অসংখ্য মানুষের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে অর্থ। ওইসব কোম্পানির হোতাদের মুখেও ফুটতো লোভনীয় কথার ফুলঝুরি। এজেন্টদেরর অনেকেই পেতেন মোটা অংকের কমিশন। দৈনিক মাথাভাঙ্গায় ওইসব কোম্পানির প্রতারণার কৌশলও ফাঁস করে ওই সময়। অনলাইনে আকর্ষণীয় নামের কোম্পানি খোলা সহজ, অনুমোদন নেয়া কঠিন। কেন না, অর্থ লগ্নিগ্রহণকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমোদন নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই শুধু অনুমোদন লাগে না, সরকারের সংশ্লিষ্ট কিছু দফতর রয়েছে সেখানে যাচাই বাছাই হয়। যেসব কোম্পানি অর্থ লগ্নি নেয় তাদের একটি ট্রেড লাইসেন্স কিম্বা কোম্পানির নামে টিন নম্বর থাকাই যথেষ্ট নয়। সমিতি করে টাকা নিলেও সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। অথচ হাজার হাজার টাকা লগ্নি নেয়া হচ্ছে। লগ্নিকৃত অর্থ কোথায় যাচ্ছে? এখানেও কি হুন্ডি নাকি অন্য কিছু? প্রশাসনের ক্ষতিয়ে দেখা জরুরি।

Comments (0)
Add Comment