আদালতে কাঁদলেন পরীমনি বললেন আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার: আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় কাঁদলেন গ্রেফতার নায়িকা পরীমনি। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ‘ফাঁসানো’ হচ্ছে। এদিকে, আদালতে গিয়েছিলেন পরীমনির বয়োবৃদ্ধ নানা শামসুল হক গাজী। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, পরীমনি পরিস্থিতির শিকার। সে কোনো অপরাধ করেনি। অপরদিকে পরীমনি, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ ও মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে ফের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে পরীমনি ও মৌ দুইদিনের এবং রাজের দুটি মামলায় ৬ দিনের রিমান্ড হয়েছে। দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শুনানি শেষে ঢাকার হাকিম আদালত থেকে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত জনতার সামনে পরীমনি দাবি করেন, তিনি নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা শতভাগ মিথ্যা। সাংবাদিক, আপনারা কী করছেন?’ বনানী থানার মাদক আইনের মামলায় ৪দিনের রিমান্ড শেষে পরীমনিকে আদালতে হাজির করে আরও ৫দিনের রিমান্ড চেয়েছিলো সিআইডি। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরীমনির সঙ্গে গ্রেফতার তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকেও দুইদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে এজলাস থেকে বেরিয়ে লিফটে ওঠার আগে ভিড় করে থাকা উৎসুক জনতাকে উদ্দেশ্য করে পরীমনি বলেন, ‘আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে, আর আপনারা হাসছেন!’ এর আগে আদালতে শুনানির সময় পরীমনি কাঁদতে থাকেন। মিনিট পাঁচেক ধরে তিনি কাঁদতে থাকেন। আশরাফুল ইসলাম দীপুও কাঁদছিলেন। আর পরীমনির এক সিনেমার প্রযোজক রাজ ছিলেন বিমর্ষ। আদালতে তারা কোন কথা বলেননি। রিমান্ড শুনানি চলাকালে পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান দাবি করেন, পরীমনি গ্রেফতার হওয়ার পর যে পোশাক পরে ছিলেন, আজও সেই পোশাক পরে আছেন। তিনি তার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার বা কথা বলার কোনো সুযোগ পাননি। এটি একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। এই আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘একশ কয়েক ঘণ্টা ধরে তিনি একই কাপড় পড়ে আছেন।’ তখন পরীমণির পাহারায় থাকা নারী পুলিশ সদস্য এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিচারককে বলেন, এ চিত্রনায়িকা হাজতে অন্য পোশাকে ছিলেন। এজলাসে আসার সময় তিনি পোশাক পাল্টে আগের পোশাকই পড়েছেন।
সিএমএম আদালতে পরীমনির আসার সংবাদে ব্যাপক ভিড় হয়। দুপুর ১২টার দিকে আদালতে আসেন পরীমনির বৃদ্ধ নানা শামসুল হক গাজী। আদালতে শুনানির সময় অবশ্য তিনি অন্য কক্ষে ছিলেন। তার সঙ্গে পরীমনির দেখা হয়নি। ঢাকার বনানীর বাসায় পরীমনির সঙ্গেই থাকতেন শামসুল হক গাজী। আদালত প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরীমনি নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি। সব মানুষের জন্য সে দান করেছে। আর এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছে। র‌্যাবের অভিযানের দিন শামসুল হক গাজীও বনানীর ওই বাসায় ছিলেন। বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, খালি বোতল ছিলো। এখন সেগুলো মাদকের বোতল নাকি কিসের বোতল জানি না। বাবা-মাকে হারানোর পর পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার সিংহখালী গ্রামে নানাবাড়িতেই তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। নানা শামসুল হক এক সময় স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরে পরীমনির সঙ্গে তিনিও ঢাকায় চলে আসেন। পরীমনির মুক্তি দাবি করে তার নানা বলেন, নিজে একটা ফ্ল্যাট করে নাই, কিছুই করে নাই। এফডিসিতে প্রত্যেক বছরে গরিবদের জন্য গরু কোরবানি দেয়। নিজে কিছু করে নাই, সে সব মানুষের জন্য বিলিয়ে দেয়। আল্লাহ পাক যদি ওরে মাফ করে আর কি। তিনি বলেন, মেয়েটার বাপ মা কেউ নাই। আমার কাছেই বড় হয়েছে, মানুষ হয়েছে। ওর জন্য দুশ্চিন্তায় আমার ঘুম হয় না। কেউ নেই ওকে দেখার জন্য। আমার নিজেরও কিছুদিন আগে অপারেশন হয়েছে। এখনো আমি অসুস্থ। তাকে কতোদিন দেখি না। তাই বাধ্য হয়েই এখানে এসেছি।
মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে পরীমনি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ চারজনকে ফের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। বনানী থানার মাদক আইনের মামলায় পরীমনি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও দুইদিন করে রিমান্ডে পেয়েছে সিআইডি। আর প্রযোজক রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে মাদক ও পর্নোগ্রাফি আইনের দুই মামলায় মোট ছয়দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। এদিকে মাদক দ্রব্যসহ গ্রেফতার কথিত মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার দুইদিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আরও ৫ দিনের হেফাজত চাওয়া হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরীমনি কা-ে পুলিশের কাছে তারা জানতে
চাচ্ছেন আমরা কি বাড়িতে থাকবো?
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনিসহ গ্রেফতার কথিত মডেলদের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ফাঁসের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনায় অনেক বিশিষ্টজন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। মডেলদের সঙ্গে সম্পর্ক ফাঁসের হুমকি দিয়ে সমাজের বিশিষ্টজনদের কাছে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অনেকেই এ ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশের কাছে তারা জানতে চাচ্ছেন- আমরা কি বাড়িতে থাকব? আমি বললাম কেন? তারা বলছেন, আমাকে তো ওমুক মিডিয়া থেকে ফোন করে বলেছে পরীমনি নাকি রিমান্ডে আমার নাম বলেছে! অথবা পিয়াসা আমার নাম বলেছে! আমি তাকে বলেছি, ভাই আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কী? কোনো মামলা হয়েছে? তখন তিনি বলেন- কখন কে, কী করে তাতো জানি না। শফিকুল ইসলাম বলেন, একাধিক ব্যক্তি আমাদের কাছে এবং মন্ত্রী মহোদয়ের (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) কাছে জানিয়েছেন- মডেল ইস্যুতে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের তালিকার কথা বলে তাদের কাছে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, আপনি যদি এই পরিমাণ অর্থ না দেন, তাহলে আমাদের কাছে যে তথ্য আছে- তা দিয়ে নিউজ করে দেব। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এসব নিউজ করে হয়তো তাদের (বিশিষ্টজন) সামাজিকভাবে হেনস্তা করা যাবে কিন্তু আইনগতভাবে তারা কোনো অপরাধ করেছেন বলে আমি মনে করি না। যাদের ফোন দিয়ে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে তারা মামলা করছেন না কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় আছেন বলেই মামলা করতে চাচ্ছেন না। এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যদি পরীমনি বলে আমাকে সিনেমার নায়িকা বানানোর কথা বলে ওমুক ব্যক্তি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে, সেটি একটি মামলার বিষয় হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী আসামি হতে পারে অথবা ওই ব্যবসায়ী যদি বলে পরীমনি আমাকে ফাঁদে ফেলে আমার কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমন কোনো অভিযোগ কি পরীমনির পক্ষ থেকে করা হয়েছে? অথবা ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এমন অভিযোগ করা হয়েছে? কোনোটিই করা হয়নি। তো পুলিশ কেন তালিকা করবে? পুলিশের পক্ষ থেকে এমন কোনো তালিকা তৈরি হচ্ছে না বলেও জানান শফিকুল ইসলাম।

Comments (0)
Add Comment