আমি সমালোচনার পরোয়া করি না : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু এত উন্নয়নের কাজ করে গেছেন, সেখানে ঠিক উলটো প্রচার করা হতো। যেটা এখনো আমি এত উন্নয়ন করার পরেও কিছু কিছু লোকের মুখে, কিছু কথা যখন শুনি। সেই সব সুরের প্রতিধ্বনিটাই যেন আমি শুনতে পাই। সেই সব শ্রেণির লোকেরাই কিন্তু সমালোচনা, কিংবা বলেই যায়। যদিও আমি এসব পরোয়া করি না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। কারণ, যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছেন সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ গতকাল রবিবার সকালে ৭৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধনকালে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের ঘরের সুইচটা নিজের হাতে অফ করায় লজ্জার কিছু নেই। আমি কিন্তু নিজের হাতেই করি। যখনই আমি বের হই, তখনই আমার যেখানে যেখানে মনে হয় যে এখানে বিদ্যুত্টা অপ্রয়োজনীয়, আমি আমার নিজের হাতে সুইচগুলো অফ করি।’ একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার জন্য অশুভ কোনো শক্তি যাতে এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশকে যেন আবার সেই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে পিছিয়ে দিতে না পারে সে ব্যাপারেও দেশবাসীকে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের বিদ্যুত ভবনে বিদ্যুত বিভাগ আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন করেন। এসময় সংশ্লিষ্ট বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলো। অনুষ্ঠানে নবনির্মিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রকাশনা ‘হান্ড্রেড’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
বিদ্যুত কেন্দ্র পাঁচটি হচ্ছে হবিগঞ্জের জুলদায় বিবিয়ানা-৩ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র, চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র ইউনিট-২, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, বাগেরহাটে মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র এবং সিলেটের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রে উত্তরণ।
বর্তমানে বিদ্যুত গ্রাহক ৪ কোটি ৯ লাখ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ার ফলে গ্রাম পর্যায়েও সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দিতে পারায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নাগরিক সুবিধা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটা আমাদের সংবিধানে নির্দেশ করেছে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো। মানুষের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনাই ছিল সেই স্বপ্ন, এই সুযোগ তার সরকার সৃষ্টি করেছে। প্রতি ওয়াট বিদ্যুতের জন্য যে বিল দিতে হয়, তার চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের সবাইকে খুব অল্প খরচে (বিদ্যুত) দিয়ে থাকি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সবাইকে বলব যে মিতব্যয়ী হন, যা সাশ্রয় হবে। যেটা হয়ত আরেকটা গরিব মানুষকে আমরা সহায়তা দিতে পারব এবং দেশ এগিয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামীতে দেশে বিদ্যুত চালিত মেট্রোরেল চালু হবে, পর্যায়ক্রমে ভবিষ্যতে বিদ্যুত চালিত যানবাহনের ব্যবস্থা সরকার করবে, বিদ্যুত চালিত গাড়ি উৎপাদন হবে দেশে, রেল খাতটাকে ধীরে ধীরে বিদ্যুত চালিত খাতে নিয়ে আসাসহ এরকম ভবিষ্যতের বহুপরিকল্পনা তার সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাজেই বিদ্যুত সবসময় আমাদের লাগবে। অতীতের ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে আমাদের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দৈনিক ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট হয়েছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুত ভবনের বিজয় হল থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসেকা আয়েশা খান, জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান, বিদ্যুত সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান এবং গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

 

Comments (0)
Add Comment