ইতিহাস আর কেউ মুছতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ইতিহাস একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছিলো, পুরো পরিবর্তন। এখন একটা আত্মবিশ্বাস এসে গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাস আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না, আর মুছতে পারবে না। সেজন্য আমি দেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ স্বাধীন, বাংলাদেশ স্বাধীনই থাকবে এবং আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন। সোমবার ছিল শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। জাতির পিতা হত্যাকা-ের পর বাধ্য হয়ে ছয় বছর প্রবাসজীবন কাটিয়ে সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একরকম জোর করেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে অংশ নেন। সেদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রচ- ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কোলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে যখন তিনি ট্রাকে করে রাজধানীর বৃষ্টিস্নাত পথ ধরে যাচ্ছিলেন, তখন লাখো জনতা তাকে স্বাগত জানায়। বৈরী পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসার সময়কার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় অনেক ঝড়ঝাপটা এবং বাধা অতিক্রম করেই আমাকে দেশে আসতে হয়েছিল। তখনকার সরকার কিছুতেই আমাকে আসতে দেবে না, আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র, অনেকভাবে চিঠিপত্র পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাই করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানতাম জাতির পিতার হত্যাকারীরাই তখন ক্ষমতায়, খুনিদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় আমি চলে এসেছি। কিছুই চিন্তা করিনি। কারণ, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এই স্বাধীনতাকে আমার সফল করতেই হবে-এভাবেই একটা প্রতিজ্ঞা আমার আর রেহানার সব সময় ছিল।
দিনটির ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আবহাওয়া স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসেছিলাম তো ঝড় মাথায় নিয়ে। সেদিন ৬০ মাইল বেগে ঝড় হচ্ছিল, তখন আমি ট্রাকে। আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়।
তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তখনকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, যারা আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচন করে এবং আমি যেটা জানতাম না। তারপর থেকে যারা আমার সঙ্গে ছিল এবং এদেশের জনগণ, যে জনগণের শক্তিটা হচ্ছে সব থেকে বড় শক্তি। কারণ, আমি যখন বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে এদেশে এসেছি, গ্রামেগঞ্জে যেখানেই গিয়েছি; সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ তাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক স্নেহ, অনেক দোয়া। কাজেই আমার মনে হয়, ওই শক্তিটাই সব থেকে বড় শক্তি ছিল।
আওয়ামী লীগের ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, দেশে এবং দেশের বাইরের অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি-এটাই সবথেকে বড় কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার দলে নেতাকর্মী অনেকে আজকে নেই। সে সময় যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের অনেককেই হারিয়েছি। তারপরও যারা আছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আমার ফিরে আসার ব্যাপারে প্রথম স্ট্যাটমেন্ট দেন ছাত্রলীগের তরফ থেকে ওবায়দুল কাদের। সে তখন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। আর যুবলীগের পক্ষ থেকে আমাদের আমির হোসেন আমু। আর পার্লামেন্টে কথাটা তুলেছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। যদিও তিনি পরে অন্য দলে চলে যান। কিন্তু তিনিই প্রথম আমার ও রেহানার দেশে আসার বিষয়টা তুলেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা বলতে পারি, আল্লাহ সব সময় সহযোগিতা করেন এবং আল্লাহ কিছু কাজ দেন মানুষকে, সে কাজটা যতক্ষণ শেষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ রক্ষা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, এগিয়ে যাবে-সেটাই আশা করি। আর এই করোনাভাইরাসে যাদের হারিয়েছি, তাদের আত্মার মাগফেরাত এবং শান্তি কামনা করি।

Comments (0)
Add Comment