ইসি নিবন্ধিত দলের কাছে নাম চাইবে সার্চ কমিটি

সার্চ কমিটির প্রথম সভা : কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক বসবে আগামীকাল

স্টাফ রিপোর্টার: যোগ্যতম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) খুঁজে পেতে এবার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে শনি ও রোববার তিন ধাপে এসব বৈঠক হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে না কমিটি। সেক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ইমেইলের মাধ্যমে সিইসি ও ইসিদের নাম চাওয়া হবে। এর বাইরেও যদি কেউ নাম প্রস্তাব করতে চান তারও সুযোগ থাকছে। রোববার সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল (আজ সোমবার) থেকে কমিটির হাতে ১৫ কার্যদিবস আছে। এর আগেই বাছাই তালিকা চূড়ান্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে, তাদের কাছ থেকে আমরা নাম চাইব। নোটিফিকেশনের মাধ্যমে কেবিনেট ডিভিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ চাইলেও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
পরবর্তী বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগামী পরশু (আগামীকাল মঙ্গলবার) আমরা আবার মিটিংয়ে বসব। এছাড়া আগামী শনিবার দিন ২টা এবং রোববার দিন ১টা মোট তিনটা মিটিং হবে। সিভিল সোসাইটি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এবং নির্বাচনসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি এ তিনটি মিটিংয়ে বসবে। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হবে। এরপর আইনে যেসব যোগ্যতার কথা বলা আছে সেগুলো বিবেচনা করে ৫ জনের বিপরীতে ২ জন করে মোট ১০ জনের নাম দেয়া হবে।
সার্চ কমিটির কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কমিটির হাতে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। যদি ১৪ তারিখের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে তাহলে তার আগেও কাজ শেষ করতে পারবে সার্চ কমিটি।
বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, আন্তরিক পরিবেশে সার্চ কমিটির প্রথম সভা হয়েছে। সবাই স্বচ্ছতার সঙ্গে এই দায়িত্ব সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত। সদস্যরা মনে করছেন, পুরো জাতি তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন তারা। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবেন না তারা। তিন ধাপের প্রথম বৈঠক শুরু হবে ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায়। চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। একইদিন দুপুর পৌনে ১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত দ্বিতীয় বৈঠক হবে। তৃতীয় বৈঠকটি হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল সোয়া ৪টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। তিন ধাপের এ বৈঠকে কোন ধাপে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, প্রতি গ্রুপে কতজনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে হবে তা রোববার পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য সার্চ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
গতবার সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে এভাবে বৈঠক করা হয়নি বলে জানা গেছে। এবার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলে, গতবার কিছু বিষয়ে গ্যাপ ছিল বলে দায়িত্বশীলদের মধ্যে মূল্যায়ন রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন গঠনে বিশিষ্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই একাধিক গ্রুপে ভাগ করে সবক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের পরামর্শ নিতে চায় সার্চ কমিটি। আমন্ত্রিত অতিথিদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করা হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রের সব পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা সব সময় সংরক্ষিত থাকে। সেখান থেকে সার্চ কমিটি যাদের প্রয়োজন মনে করবে তাদের ডাকবে। প্রতি গ্রুপে কতজনকে ডাকা হবে তা নিশ্চিত না হলেও সুপ্রিমকোর্ট জাজেস লাউঞ্জে ১২০ জন বসার ব্যবস্থা আছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য নাম সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো। কমিটি আইন অনুযায়ী দায়িত্ব ও কার্যাচবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির সাচিবিক সহায়তা দেবে। এর আগে ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত আইনের খসড়া পাশ হয়। ২৭ জানুয়ারি সেটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে পাশের পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি বিলে সম্মতি দিলে সেটা আইনে পরিণত হয়। ৩০ জানুয়ারি আইনের গেজেট প্রকাশ হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment