এক দিনেই ভোজ্য তেলের দাম লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: বাজারে বেড়েই চলেছে ভোজ্য তেলের দাম। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গত জানুয়ারিতে ব্যবসায়ীদের বৈঠক, বাজার মনিটরিং কোনো কিছুতেই ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি ভোজ্য তেলের বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি এমন অজুহাতে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম। খুচরা বাজারে আরেক দফা বেড়েছে সয়াবিনের দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের গতকালের খুচরা বাজারদরের প্রতিবেদনে এক দিনেই প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনে কোম্পানিভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে। সব মিলিয়ে গত দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটার সয়াবিনে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বেড়েছে পাম অয়েল ও পামসুপারেরও, যা ভোগান্তিতে ফেলেছে ভোক্তাদের। কেন দফায় দফায় বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম, এ প্রশ্ন তাদের। ভোক্তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি এমন অজুহাতে একটি চক্র কারসাজি করছে ভোজ্য তেল নিয়ে। তারা দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ওঠানামা করছে যে কারণে দেশের আমদানিকারকরা লোকসানের ভয়ে একসঙ্গে বেশি পরিমাণে ভোজ্য তেল কিনছেন না। তারা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন ১ হাজার ১০০ ডলার ও পাম অয়েল ১ হাজার ৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই দর ২০-২৫ দিন আগে ১০০ থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত কমেছিলো। আর গত বছর জুলাইয়ে প্রতি টন সয়াবিনের দাম ছিলো ৭০০ ডলার। দেশে চাহিদার ৯০ শতাংশ ভোজ্য তেল আমদানি করা হয় জানিয়ে তারা বলেন, দেশে যে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব।
দাম বাড়ার এটাই কি একমাত্র কারণ? এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার তুলনায় সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ কম। কারণ, আর্জেন্টিনায় দীর্ঘদিন ভোজ্য তেল মিলগুলোতে শ্রমিক ধর্মঘট চলেছে। ব্রাজিল ও আজেন্টিনা থেকে সয়াবিন আমদানি করা হয়। এছাড়া মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম অয়েল আমদানি করা হয়। এই দুটি দেশে চলতি ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে পাম অয়েলের মৌসুম শুরু হচ্ছে। কিন্তু দেশ দুটি আশঙ্কা করছে এ বছর তাদের পাম অয়েলের উৎপাদন কম হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা মহামারির কারণে গত বছর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চীন ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণে ভোজ্য তেল আমদানি করেছে। চলতি বছরও তারা তাদের চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে ভোজ্য তেলের অর্ডার করেছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার তুলনায় ভোজ্য তেলের সরবরাহ কম। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদনের বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন কোম্পানিভেদে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১১৮ থেকে ১২০ টাকা, পামসুপার ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, পাম অয়েল ১০০ থেকে ১০২ টাকায় বিক্রি হয়।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে গত এক বছরে বোতলজাত সয়াবিন তেলে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও খোলা পাম অয়েলে ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ দাম বেড়েছে।
ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো গতকাল বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশেও ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে বর্তমানে যে দরে ভোজ্য তেল বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে দাম এত বেশি হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ সয়াবিন ৪ হাজার ৪৫০ টাকা, পাম অয়েল ৩ হাজার ৭১০ টাকা ও পামসুপার ৩ হাজার ৮১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি সচিবালয়ে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য কমবেশি হওয়ার কারণে দেশে তা ওঠানামা করে। তাই সমস্যার গভীরে গিয়ে আমরা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।
খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে আটা, ময়দা, ব্রয়লার মুরগি, আদা ও হলুদের। প্যাকেট আটা ও ময়দা কেজিতে ২ টাকা বেড়ে যথাক্রমে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা ও ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা সাদা আটা ৩০ থেকে ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আমদানিকৃত আদা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও দেশি হলুদের কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে আমদানিকৃত হলুদও।

Comments (0)
Add Comment