করোনা সংক্রমণে ফ্রান্স ও ইতালিকে ছাড়ালো ব্রাজিল

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হিসাবে উল্ফম্ফন ঘটেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। ফ্রান্স ও ইতালিকে ছাড়িয়ে করোনা সংক্রমণে ব্রাজিল এখন বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে। দেশটিতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা দুই লাখ ৩৩ হাজার পার হয়েছে। আর প্রাণহানি হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার জনের। দেশটি যে করোনা নতুন হটস্পট হতে পারে তা আগেই সতর্ক করেছিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। গত এক সপ্তাহ ধরে ব্রাজিলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৬ লাখ)। এর পরেই আছে রাশিয়া (প্রায় তিন লাখ), স্পেন (পৌনে তিন লাখ) ও যুক্তরাজ্য (প্রায় আড়াই লাখ)। তবে আক্রান্ত শনাক্তে এই চারটি দেশ যে পরিমাণ পরীক্ষা করেছে, সে তুলনায় ব্রাজিলের পরীক্ষা খুবই নগণ্য। এ কারণে দেশটির প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা উঠে আসছে না। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের উপাত্ত বলছে, করোনায় আক্রান্ত শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ব্রাজিলে, যার পরিমাণ ইরানের অর্ধেক। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৬ হাজারের। রাশিয়ায় এ সংখ্যা ৪৭ হাজারের বেশি। স্পেন ও যুক্তরাজ্যে যথাক্রমে ৬৫ হাজার ও সাড়ে ৩৬ হাজার। আর ব্রাজিলে প্রতি ১০ লাখ মানুষে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন হাজার জনের। ফলে দেশটির প্রকৃত পরিস্থিতি জানা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে দেশটির করোনা মোকাবেলা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বারবার মতভেদ দেখা দিয়েছে। মতবিরোধের কারণে দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মধ্যেই শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেলসন টেইক। তার আগে আরেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী লুইস হেনরিক মেনদেতা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে বরখাস্ত হন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপেক্ষা করে প্রমাণিত নয় এমন ওষুধের ব্যাপক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েও বিতর্কের মুখে পড়েছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কঠোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিধি, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের পদক্ষেপ নিয়ে স্কুল, দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয় ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি রাজ্যসরকার। কিন্তু বোলসোনারো এর তীব্র সমালোচনা করেন। রাজ্যগুলোর এসব পদক্ষেপের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি অসহনীয় হয়ে উঠছে এ যুক্তি দেখিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা বলেন তিনি। চলতি বছর ব্রাজিলের অর্থনীতি স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকোচনের মুখে পড়বে বলে সরকার আশঙ্কা করছে।

আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সংগঠন এপিআইবি জানিয়েছে, করোনাভাইরাস বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে সংক্রমিত করেছে। অন্তত ৩৮টি আদিবাসী অঞ্চলে এটি ছড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৪৬ জন আদিবাসী আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে মারা গেছেন ৯২ জন। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই আমাজনের। দ্য সোসিও এনভায়রনমেন্টাল ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ব্রাজিলের গহিন আমাজনে খনি শ্রমিকদের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রথম আদিবাসীদের মধ্যে ছড়ায়।

বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পৌনে ৪৮ লাখ। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে তিন লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। সুস্থ হয়েছে সাড়ে ১৮ লাখ করোনা রোগী।

করোনা সংক্রমণ রুখতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই রাস্তাঘাটে ছড়ানো হচ্ছে জীবাণুনাশক। কিন্তু এই জীবাণুনাশক খোলা জায়গায় ছড়ালে তাতে কোভিড-১৯ ভাইরাস মরে না বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএইচও। উল্টো এ জীবাণুনাশক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে সতর্ক করা হয়েছে।এক বিবৃতিতে ডাব্লিউএইচও বলেছে, ‘খোলা জায়গা যেমন বাজার এলাকা কিংবা রাস্তায় জীবাণুনাশক ছড়ালে তাতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের কিছু হয় না। কারণ ধুলো ও ইট-পাথরে সেই জীবাণুনাশকের উপাদানগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। যদি এমন জায়গায় ধুলাবালি না-ও থাকে, তার পরেও জীবাণুনাশকের উপাদানগুলো কম সময়ের মধ্যে পুরো জায়গার ওপর ছড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তার কর্মক্ষমতা অনেক কমে যায়। বরং এই জীবাণুনাশক ছড়ানোর ফলে পশু-পাখি থেকে শুরু করে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।

ডাব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, কোনো ব্যক্তির ওপর কখনোই জীবাণুনাশক প্রয়োগ করা উচিত নয়। বিশেষ করে ক্লোরিন ও অন্যান্য টক্সিক রাসায়নিক উপাদান মানুষের চোখ ও ত্বকের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেই জানানো হয়েছে। এই উপাদানগুলো শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি করতে পারে।

বাড়ির ভেতরেও জীবাণুনাশক ছড়িয়ে বিশেষ কোনো লাভ নেই বলেই জানিয়েছে ডাব্লিউএইচও। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, যদি জীবাণুনাশক ছড়াতেই হয়, তাহলে তার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো, কোনো কাপড়ে নিয়ে তারপর তা দিয়ে মোছা। কারণ কাপড়ে জীবাণুনাশকের উপাদানগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না। ফলে তা দিয়ে কোনো কিছু মুছলে তার ওপর জীবাণুনাশকের কাজ বেশি হয়। যদিও তাতেও কভিড-১৯ ভাইরাসের বিশেষ কিছু ক্ষতি হয় না।

নভেল করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে নেপালে। একটি জেলা থেকে রাজধানী কাঠমা-ু আনার পথে ২৯ বছর বয়সী ওই নারীর মৃত্যু হয় বলে শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ থেকে লকডাউনে আছে নেপাল। দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এসব পদক্ষেপ নিয়ে ভাইরাস ঠেকাতে দেশটি প্রায় সফল হয়েছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, নেপালে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ২৯১ জন।

যুক্তরাষ্ট্র কভিড-১৯-এর পরীক্ষা বাড়াতে ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি ডিআইওয়াই নজাল স্যাম্পল কালেকশন কিটের অনুমোদন দিয়েছে। দেশটির খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ (এফডিএ) গত ৮ মে মুখের লালার নমুনা ব্যবহারকারী এই পদ্ধতির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান রটজারস্ ইউনিভার্সিটিকে ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহে এই কিট ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেয়। গতকাল শনিবার এভারলিওয়েলের তৈরি ঘর থেকে নজাল স্যাম্পল কালেকশন কিটের অনুমোদন দেয় এফডিএ। যাতে সংগৃহীত নমুনা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করা যাবে।

কভিড ট্র্যাকিং প্রকল্প জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিলের তুলনায় দ্বিগুণ হারে অর্থাৎ প্রতিদিন তিন লাখেরও বেশি লোকের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে।

Comments (0)
Add Comment