কে এই হেলেনা জাহাঙ্গীর?

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের পদ খোয়ানো ব্যবসায়ী নেতা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। আজ শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। হেলেনা জাহাঙ্গীরের ঢাকার গুলশানের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

কয়েক বছর ধরে আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা হেলেনা জাহাঙ্গীর। সম্প্রতি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টারকে ঘিরে বিতর্কিত হন। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ বাতিল করা হয় তার। সবশেষ বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করে র‍্যাব। তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা ও হরিণের চামড়া জব্দ করা হয়েছে।
ফেসবুকে বেশ সক্রিয় হেলেনা জাহাঙ্গীর মূলত একজন নারী উদ্যোক্তা হলেও কিছুদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ আসনের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েও আলোচনায় আসে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর। পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সদস্য তিনি। জয়যাত্রা নামে একটি আইপি টেলিভিশনেরও মালিক তিনি। এছাড়া প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১০ হাজারেও বেশি কর্মী আছে তার এসব প্রতিষ্ঠানে। হেলেনা জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছেন রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে। কুমিল্লার মেয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরে ব্যবসায়ী হিসেবে উত্থান খুব বেশিদিন আগের নয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় তার। হেলেনার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর। বিয়ের পর শেষ করেন স্নাতকোত্তর। এরপর উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলা শুরু। হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। হেলেনার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যান হেলেনা। হেলেনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১-তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে হেলেনা শুরু করেন প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি ব্যবসা। নিট কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট লিমিটেড দিয়ে শুরু করে জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় একে একে তিনি গড়ে তোলেন জয় অটো গার্মেন্টস লিমিটেড, জেসি এমব্রয়ডারি অ্যান্ড প্রিন্টিং এবং হুমায়রা স্টিকার লিমিটেড। সবকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাল ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান জগার্স সোসাইটি ও গুলশান হেলথ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত।

Comments (0)
Add Comment