ঝিনাইদহে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহককে মারধরের অভিযোগে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: অগ্রণী ব্যাংক ঝিনাইদহ প্রধান শাখার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক গ্রাহককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অগ্রণী ব্যাংক ঝিনাইদহ প্রধান শাখায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ওই ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম রবি। গতকাল সোমবার দুপুরে এ খবর নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান। অভিযুক্ত তিনজন হলেন- অগ্রণী ব্যাংক ঝিনাইদহ প্রধান শাখার সিনিয়র অফিসার সাইফ মাহমুদ, বেনজির এবং আনসার সদস্য মো. মনির হোসেন।
জানা গেছে, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই ব্যাংকে টাকা তুলতে যান জেলা শহরের চাকলা পাড়া এলাকার মৃত সামছুর রহমানের ছেলে শিক্ষক রবিউল ইসলাম রবি। সে সময় তাকে বেদম মারপিট করে আহত করা হয়। পরে বিষয়টি সদর থানায় বসে মিটমাট করে দেয় পুলিশ। এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ করার অপরাধে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয় রবিউলকে। পরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সদর থানায় একটি জিডি করেন তিনি। আহত রবিউল ইসলাম জানান, বাসা বাড়িতে টিউশন করে এবং সাথে একটি কোচিং সেন্টারে পড়িয়ে সংসার চলছিল তার। করোনার কারণে গত ৩ মাস ধরে তার আয়ের সব পথ বন্ধ। এতদিন ছাত্র-ছাত্রীরা সাহায্য করে আসছিলো। ব্যাংকে তার জমা আছে মাত্র দুই হাজার সত্তর টাকা। রোববার নিরুপায় হয়ে এক হাজার পাঁচশত টাকার একটি চেক লিখে জেলা শহরের অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় লাইনে দাঁড়ান তিনি। বিদ্যুৎ বিল এবং টাকা তোলার জন্য দীর্ঘ লাইন। নারীসহ সকলেই একই লাইনে দাঁড়িয়ে। সেখানে কোন শৃঙ্খলা নেই।
রবিউল অভিযোগ করেন এ অবস্থা দেখে তিনি পৃথক পৃথক লাইন করে দেওয়ার কথা বলেন। এ কথা বলা মাত্রই কর্তব্যরত আনসার সদস্য মনির ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে হট্টগোল বেধে যায়। ব্যাংক ম্যানেজার (এজিএম) হাশিমুর রহমানের নির্দেশে ১১নং ও ৪নং ডেস্ক থেকে দুজন সিনিয়র অফিসার সাইফ মাহমুদ ও বেনজির ছুটে এসে তাকে মারপিট শুরু করে দেয়। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করা হয়। এসময় তার চোখের চশমা ও হাতে থাকা মোবাইল সেট ভেঙ্গে ফেলা হয়। ঘটনা সময় উপস্থিত কেউ ভয়ে তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেননি।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার দিন আহত শিক্ষক লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেন। সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় পুলিশের একটি দলকে। ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পরে ব্যাংকটির ম্যানেজারসহ কয়েক জন কর্মকর্তাকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মিটমাট করা হয়। পরবর্তীতে বাড়ি ফেরার পথে ওই শিক্ষককে আরেক দফায় নাশের হুমকি দেন এবং অপদস্থ করার চেষ্টা করেন ওই ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সাইফ মাহমুদ। পরে রাতেই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সদর থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করেন রবিউল ইসলাম রবি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজার হাশিমুর রহমান জানান, ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গেছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অগ্রণী ব্যাংক ঝিনাইদহ জোনের এজিএম দ্বীন মুহাম্মদ বলেছেন, গ্রাহককে মারপিট করার ঘটনাটি ঘটনটি দুঃখজনক। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সদর থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের দ্রুত আইনে আওতায় আনা হবে। সাখাওয়াত হোসেন নামের একজন এসআইকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় দেশ বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সোমবার প্রবাসী কয়েকজন ছাত্র তাদের শিক্ষক রবিউলের চিকিৎসা জন্য অর্থ সহায়তা পাঠিয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ও শাস্তির দাবি করেছেন তারা।

Comments (0)
Add Comment