দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের কার্যক্রম ১১৪ দিন বন্ধ : কর্মহীন হয়ে পড়া পরিবারের সদস্যদের মানবেতর জীবনযাপন

দর্শনা অফিস: কাক ডাকা ভোর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যেখানে থাকতো অসংখ্য মানুষের সমাগম। দিনভর যেখানে দেশ-বিদেশের মানুষের আনা-গোনায় মুখরিত থাকতো, সেই স্থানটি আজ জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ১১৪ দিন বন্ধ রয়েছে দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম। যে কারণে খেটে খাওয়া ৫ শতাধিক মানুষ হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছেন সেই পরিবারের সদস্যরা। কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি তা রয়েছে অনিশ্চিত। এ পর্যন্ত সরকার প্রায় ১শ’ কোটি রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে জয়নগর চেকপোস্ট বন্ধের কারণে। করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্তের আজ ১১৮তম দিন। চলতি বছরের ১২ মার্চ দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত বন্ধ হয়। যেহেতু অনেক পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি ভারতে আটকে পড়েন, সেহেতু সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দেয়া হয়। ২৬ মার্চ থেকে গোটা দেশ লকডাউনের আওতায় এনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সে থেকেই জয়নগর চেকপোস্টের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ চেকপোস্টে যাত্রীদের মালামাল বহনকারী (কুলি) ভ্যান চালক, ইজিবাইক, সিএনজিসহ সকল প্রকার যানবাহন চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। জয়নগরের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দিনমজুরের কাছ থেকে শোনা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরেই চেকপোস্টে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লম্বা সময় ধরে চেকপোস্টের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছি প্রায় ৫শ’ জন। ৫শ’ জনের কর্মের উপর নির্ভরশীল প্রায় ২ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়ায় খেয়ে না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। সরকারি-বেসরকারিভাবে যতোটুকু সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। পরের সাহায্যে আর কদিন চলা যায়। এভাবে আরও কিছুদিন চললে না খেয়েই মরতে হবে। জয়নগর চেকপোস্টে রয়েছে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিজিবি ক্যাম্প, আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, স্বাস্থ্য বিভাগ, সংঘনিরোধ ভবনসহ অর্ধশত বিভিন্ন দোকানপাট। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথা নিয়মে বেতন পেলেও খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে। দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট সীমান্ত পথে প্রতিদিন গড়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা ছিলো ২ হাজার। এদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে ভ্রমণ কর কাটতে হতো। বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের প্রত্যেক যাত্রীকে ভ্রমণ কর হিসেবে ৫ টাকা সরকারের রাজস্বখাতে জমা দিতে হয়ে থাকে। ভারতীয়রাও বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফেরার সময় ৫শ’ টাকা ভ্রমণ কর দিতে হয়। ফলে গড়ে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার যাত্রীকে এ ভ্রমণ কর দিতে হতো সরকারকে। তাছাড়া ভারত থেকে আনা মালামালের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও ছিলো কম নয়। সে হিসেব মতো আজ ১১৪ দিনে ৮৫ কোটি টাকা ভ্রমণ ফি বাবদ রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এছাড়া ভারত থেকে আসা মালামালের রাজস্ব আদায়সহ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা। জনসমাগম জমজমাট জয়নগর চেকপোস্ট এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা এখন শুধুই অপেক্ষার পালা মাত্র।

Comments (0)
Add Comment