নারায়ণগঞ্জে মামুনুল হককে নিয়ে তোলপাড়

নারীসহ ঘেরাওয়ের পর বললেন শরিয়তসম্মত দ্বিতীয় স্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে লংকাকা- ঘটেছে। হোটেল রয়্যাল রিসোর্টে ‘নারীসহ’ বেড়াতে গিয়ে তিনি স্থানীয় জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়েন। তবে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ওই নারীসহ তাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এরপর সোনারগাঁয়ে তারা ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে পথচারী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এ সময় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। হঠাৎ মহাসড়ক অবরোধ করায় সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ও ভাঙচুর করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরের পর ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ আমিনা তৈয়বাকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের হোটেল রয়্যাল রিসোর্টে ওঠেন মাওলানা মামুনুল হক। রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে তিনি অবস্থান করেন। বেলা ৩টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে যান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মামুনুল হক বলেন, অবকাশ যাপনের অংশ হিসেবে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর পর তিনি হোটেলে উঠেছেন। তবে নানা ধরনের প্রশ্নে তিনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তফা মুন্না, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম ও সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমান ঘটনাস্থলে যান। অন্যদের বের করে দিয়ে কক্ষে মাওলানা মামুনুল হককে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অপরদিকে, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে হোটেলের মূল ফটকে অবস্থান করেন এবং মামুনুলকে গ্রেফতারের দাবি জানান। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হেফাজতের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হোটেলের সামনে গেলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। এরপর হেফাজত কর্মীরা হোটেলের প্রধান ফটক, দরজা-জানালার কাঁচ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বিভিন্ন স্থানে তারা হামলা চালান। এরপর তারা হোটেল থেকে মাওলানা মামুনুলকে ছিনিয়ে নেন। আমিনাকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যও তারা হোটেলে ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা আমিনাকে নিজেদের হেফাজতে নেন। এরপর মিছিল নিয়ে তারা স্থানীয় হাবিবপুর ঈদগাঁ মাঠে সমবেত হন। সেখানে তাৎক্ষণিক সভায় বক্তব্য দেন মাওলানা মামুনুল হক। সমাবেশ শেষে হেফাজতের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্থানীয় মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। আগুন জ্বালিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। সোনারগাঁ যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর মার্কেটেও তারা হামলা চালান।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমান বলেন, মাওলানা মামুনুল হককে হোটেল কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজতের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসেন। তারা হোটেলে ব্যাপক ভাংচুর শুরু করেন। নেতাকর্মীদের শান্ত করার কথা বলে মাওলানা মামুনুল হক নিচে নেমে আসেন। এরপর তিনি হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে মিশে যান। হেফাজতের কর্মীদের অব্যাহত হামলা ও ভাঙচুরের মুখে পুলিশ দ্বিতীয় ‘স্ত্রী’ আমিনাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
রয়্যাল রিসোর্টের জিএম লাল মিয়া বলেন, মাওলানা মামুনুল হক ও আমিনা তৈয়বা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে ওঠেন। কিন্তু যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হোটেলে এলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। আর এর জের ধরে হেফাজতের কর্মীরা হোটেল ভাঙচুর করেন।

 

Comments (0)
Add Comment