নৌকার প্রার্থী খালেককে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিজল জয়ী

কঠোর ও নজীরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ঝিনাইদহ পৌর নির্বাচন সম্পন্ন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদর পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নারিকেল গাছ প্রতীকে পেয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিব্দন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৯ ভোট। এছাড়া আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান মোবাইল ফোন প্রতীকে তিন হাজার ৬৬২ এবং হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম ৯৩৮ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মাগুরা জেলা নির্বাচন অফিসার অলিউল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, নির্বাচনে ৪৭ কেন্দ্রের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। মোট ভোটার ছিলেন ৮২ হাজার ৬৯৫ জন। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে এবারই প্রথম পৌর এলাকার ৪৭ কেন্দ্রে ৪৭ জন নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এছাড়া ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পাঁচ প্লাটুন বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়। চলতি বছরের ১৫ জুন এ পৌরসভায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু একাধিক সংঘর্ষ, আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা কারণে মাত্র তিনদিন আগে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে এক মেয়াদে দীর্ঘ ১১ বছর দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৩ মার্চ এ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

কঠোর ও নজীরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ঝিনাইদহ পৌর নির্বোচন শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে। সকাল থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ভোট উৎসবে বাগড়া দেয়। ফলে ঘণ্টা দুয়েক ছন্দ পতন ঘটে। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে ভোট দিতে দেখা গেছে। ইভিএম পদ্ধতি ভোট হওয়ায় ঝিনাইদহ শহরের মানুষ এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখি হয়। প্রথমে ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মাঝে সন্দেহ থাকলেও ভোট প্রদানের পর সেই ঘোর কেটে যায়। বেবি খাতুন ও হেনা বেগম নামে দুই ভোটার জানান, ইভিএমে তাদের ভোট দিতে কষ্ট হয়নি। সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা ইভিএম বুঝিয়ে দিলে সে মোতাবেক তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এদিকে ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভিতরে বাইরে নজীরবিহীন নিরাপত্তা ছিলো। বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা টহলে ছিলো। ভোট দিয়ে এসে ভোটারা জানান, রুমে রুমে অনেক প্রার্থীর এজেন্ট না থাকলেও কারচুপির কোনো সুযোগ ছিলো না। নিজের পছন্দের প্রতিকে ভোট দিতে পেরেছেন।

উল্লেখ্য প্রায় সাড়ে ১১ বছর পর চলতি বছরের গত ১৫ জুন এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপর হামলার অভিযোগে নৌকা প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে শেষে উচ্চ আদালত দ্রুত নির্বাচন করার নির্দেশ দিলে নির্বাচন কমিশন ১১ সেপ্টম্বর ভোট গ্রহণের দিন ধার্য্য করে। নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী মেয়রপদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। তারা হলেন নৌকার প্রার্থী আব্দুল খালেক, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল (নারিকেল গাছ), মিজানুর রহমান মাসুম (মোবাইল প্রতিক) ও ইশা আন্দোলনের মাওলানা সিরাজুল ইসলামের হাত পাখা।

এছাড়াও যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন ৫নং ওয়ার্ডে টানা ছয়বার জয়ী হয়ে রেকর্ড সৃষ্টিকারী সাবেক ফুটবলার সাইফুল ইসলাম মধু ও ৬নং ওয়ার্ডে মহিউদ্দীন মহি। এছাড়া বাকী ৭টি ওয়ার্ডে নতুন মুখ বিজয়ী হয়েছে। বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে টিপু সুলতান, ২নং ওয়ার্ডে মো. আবু বক্কার, ৩নং ওয়ার্ডে আলাউদ্দীন জোয়ারদার লাড্ডু, ৪নং ওয়ার্ডে শামসিল আরেফিন কায়সার, ৫নং ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলাম মধু, ৬নং ওয়ার্ডে লিয়াকত হোসেন, ৭নং ওয়ার্ডে মহিউদ্দীন, ৮নং ওয়ার্ডে সাদেক আলী ও ৯নং ওয়ার্ডে রেজাউল করিম রেজা। এছাড়া মহিলা কাউন্সিলর পদে সাবেক কাউন্সিলর ফারহানা রেজা আনজু, বুলবুলি বেগম ও সুফিয়া বেগম নির্বাচিত হন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস ছালেক জানান, ঝিনাইদহ পৌরসভায় মোট ভোটার ৮২ হাজার ৬৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪০ হাজার ৪৪৬ জন ও নারী ভোটার ৪২ হাজার ২৪৯ জন। ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য ৪৭টি কেন্দ্র্র ও ২৬৫টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ প্রার্থী ছাড়াও সাধরণ কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ১৮ জন নির্বাহী ও ৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও ৩৫৫ জন পুলিশ ও ৮০১ জন আনসার নিয়োজিত ছিলেন। জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুস ছালেক সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

Comments (0)
Add Comment