পরীমণি হেলেনাসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব তলব

হেলেনা পিয়াসা মিশুদের আরও ৬ মামলা সিআইডি : পিয়াসা জিমি কারাগারে
স্টাফ রিপোর্টার: চিত্রনায়িকা পরীমণি, ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটির চিঠি পাওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের অ্যাকাউন্টে লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি তাদের অবৈধ সম্পদ ও অপরাধলব্ধ আয়ের খোঁজ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রত্যেকের সম্পদের হিসাব খুঁজতে পৃথক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন সিআইডি প্রধান। সূত্র জানায়, সিআইডির তদন্তে সহায়তার জন্য এবং যৌথ তদন্তের স্বার্থে গতকালই বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে বিএফআইইউ। এর আগে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আসামিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন নথি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কাগজপত্র এবং সম্পদের হিসাবের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত কর্মকর্তারা। এখন তারা আয় এবং আয়ের বাইরে থাকা সম্পদের পরিমাণ যাচাই-বাছাই করে দেখছেন।
এদিকে যে আটজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ এবং প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজও আছেন। বাকি যে তিনজনের তথ্য চাওয়া হয়েছে, তারা হলেন- রোজিনা আক্তার, যার ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বরিশালের বানারীপাড়া এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের নেয়ামত উল্লাহর দুই ছেলে সালেহ চৌধুরী ওরফে কার্লোস ও মিশু হাসান।
গতকাল মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, চিত্রনায়িকা পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমি ও কবিরকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। এর আগে পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার ব্যবসায়িক একাধিক পার্টনার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তার এক পার্টনার মিশু ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। আরেক পার্টনার ডায়মন্ড ব্যাবসায়ী দিলীপ কুমারের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। চোরাচালান ও অর্থ পাচারের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে।
জানা গেছে, বিএফআইইউর চিঠিতে পরীমণির পুরো নাম শামসুন নাহার স্মৃতি উল্লেখ করে ঠিকানা দেয়া হয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া। তাদের অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, শুরু থেকে লেনদেন বিবরণী, কোনো ধরনের সঞ্চয় বা ঋণ হিসাব থাকলে তার স্থিতিসহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এসব তথ্য পর্যালোচনায় কোনো অসঙ্গতি পেলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় নজরুল ইসলাম রাজ তার কাছে মাদকের লাইসেন্স থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তার গ্রেফতার হওয়ার পেছনে তিনি পরীমণিকে দায়ী করেছেন। পরীর জন্যই তার এই দুরবস্থা, যদি পরীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ না থাকত তাহলে তার এই অবস্থা হতো না বলে দাবি করেছেন তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, পিয়াসার বিরুদ্ধে রাজধানীর ভাটারা থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ এই আদেশ দেন। এর আগে ভাটারা থানার মাদকদ্রব্য আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিয়াসাকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন। এরপর আবারও একই মামলার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের জন্য আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এ ছাড়া পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিমকে আবার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে সিআইডি। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে জুনায়েদের রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। একইসঙ্গে পরীমণির বিরুদ্ধে করা মামলার অন্য আসামি কবিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে সিআইডি। আদালত তাকেও রিমান্ড ও জামিন উভয় আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। গত ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে হাজির করে পৃথক তিন মামলায় পিয়াসাকে মোট আট দিনের রিমান্ডে পান তদন্ত কর্মকর্তারা। এর আগে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ১ আগস্ট রাতে বারিধারা থেকে তাকে আটক করা হয়।
কথিত মডেল পিয়াসা, ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর ও মিশু হাসানসহ ৯ জনের আরও ছয়টি মামলার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রাতে পুলিশ সদর দফতরের এক আদেশে এসব মামলা হস্তান্তর করা হয়। মামলাগুলো হলো- গত ৩০ জুলাই গুলশান থানায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা, গত ৫ আগস্ট মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান ও পিয়াসার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় মাদকদ্রব্য আইনে করা মামলা, একইদিনে নজরুল ইসলাম রাজ ও সবুজ আলীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলা, গত ৪ আগস্ট ভাটারা থানায় জিসানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা এবং শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানের বিরুদ্ধে একই থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলা। এছাড়া একইদিনে মিশু হাসান ও জিসানের বিরুদ্ধে পর্ণোগ্রাফি আইনে করা পৃথক মামলার তদন্তও সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে গতকাল রাতে জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।

 

Comments (0)
Add Comment