প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব সম্পন্ন

করোনার কারণে মণ্ডপগুলোতে স্বল্প পরিসরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এর আগে মণ্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কারণে এর আগে মণ্ডপগুলোতে স্বল্প পরিসরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান। এবার গজে চড়ে মর্ত্যলোক থেকে দশভুজা দেবী বিদায়। শেষবারের মতো মন্ত্রপাঠ আর উলুধ্বনিতে দেবী বন্দনা। দোলায় চড়ে এসেছিলেন দেবী দুর্গা। ঢাক-ঢোল-শঙ্খ আর ধুপ ধুনোয় তার আরাধনায় মগ্ন ছিলেন ভক্তরা। প্রতি বছর বিজয়া শোভাযাত্রার মধ্য দিয়েই চলে প্রতিমা বিসর্জনের পর্ব। কিন্তু এবার করোনা সংক্রমণের কারণে শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানে অনেকটা ভাটা পড়ে। করোনার কারণে এবারের আনন্দ শোভাযাত্রা ছিলো নিষিদ্ধ। মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হয় পাঁচদিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। মন্দিরের পুরোহিতগণ সেখানে পূজা-অর্চনা করেন এবং উলুধ্বনি দেন। মন্দিরে আগত সনাতন ধর্মাম্বলীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে সেখানে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। গত ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হয় পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবারের মতো মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী ও মহানবমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেছেন। দশমীর দিনে সকালে সিঁদুর উৎসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবং সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়।

চুয়াডাঙ্গায় চোখের জল আর ভক্তদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার মিছিলে সিক্ত হয়ে বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা। এক বছর পর আবারও ফিরে আসবেন সুখ সমৃদ্ধি আর প্রশান্তির বার্তা নিয়ে। গতকাল সোমবার ঢাকের বাদ্যের তালে তালে দেবী দুর্গার প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ শারদীয় দূর্গোৎসবের। এবছর দেবী পূজা দোলায় করে আগমন করেছিলেন। আর বিদায় বেলায় চড়লেন গজে। অশুভ শক্তির বিনাশে সমৃদ্ধ হোক দেশের অগ্রযাত্রা-এই কামনায় শুভ বিজয়াতে মেতে উঠেছিলেন সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন অঞ্চলও। এর আগে সোমবার সকাল ১০ টার মধ্যে দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। পরে বিকেল সাড়ে তিনটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় স্বল্প পরিসরে ছোট একটি শুভ বিজয়ার বর্ণাঢ্য র‌্যালী শহর প্রদক্ষিণ করে। দশমীর সকালে বিসর্জনের আগে দেবী দুর্গার সিঁথিতে সিঁদুর পরান এবং মিষ্টি মুখ করান। এ সময় মন্দিরে আগত নারীরা একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর বিনিময় করেন। সন্ধ্যায় বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করেন। চুয়াডাঙ্গার বড়বাজার শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গামন্দির, বাগানপাড়া শিবমন্দির মহিলা সংঘ, ইসলামপাড়ার শ্রী শ্রী সত্য সনাতন বাওয়ারী দুর্গা মন্দির, ফেরিঘাট রোর্ডের শ্রী শ্রী সত্যারায়ন মন্দির, মালোপাড়া শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গা উৎসব ও কালী মন্দির, কুলচারা বারোয়ারি দুর্গামন্দির, বেলগাছি শ্রী শ্রী শিব দূর্গামন্দির, তালতলা ষষ্ঠীতলা সার্বজনীন দূর্গামন্দির, তালতলা সার্বজনীন দুর্গামন্দির, আলুকদিয়া দাসপাড়া সার্বজনীন দুর্গামন্দির, দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া বারোয়ারি দুর্গামন্দির, দক্ষিণ মাঠপাড়া বারোয়ারী দুর্গামন্দিরে প্রতীমা বিসর্জন দেয়া হয় মাথাভাঙ্গা নদীতে। এবার চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় ১০৭টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৩টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২৮টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩০টি ও জীবননগর উপজেলায় ২৬টি। এসব মন্ডপগুলো বেশ আকর্ষণীয় আলোকসজ্জায় সাজানো হয়।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ এলাকায় সকল স্থানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। এবার এলাকায়  ৯টি পূজামণ্ডপে চলে শারদীয় উৎসব। নজিরবিহীন পুলিশি প্রহরার মাধ্যমে পূজা অর্চনা সম্পন্ন হয়। কোনোপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কুতুবপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া, সিন্দুরিয়া, হাসানহাটি, আলিয়ারপুর ও পদ্মবিলা ইউনিয়নের ধুতুরহাট দাসপাড়া ও খেজুরা হালদারপাড়ার প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় নবগঙ্গা নদীতে, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের সরোজগঞ্জ কাচারিপাড়া ও গড়াইটুপি ইউনিয়ের গড়াইটুপি পালপাড়া, গড়াইটুপি মাঝেরপাড়া ও তেঘরির প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় চিত্রা নদীতে।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে,  কুমার নদের ভরা বুকে বিজয়া দশমীতে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার সবগুলি এবং কালিদাসপুর গ্রামের প্রতিমা কুমার নদে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। বরাবরের মতো এ বিসর্জন উপলক্ষে কুমার নদের তীরে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ঢল নামে। সন্ধ্যার পর পর বিসর্জন দেয়া হয় সবকটি প্রতিমা। দেবী বিদায়ের আগে দুপুর ১২টায় মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা (মা-বোনেরা) সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক প্রশান্ত অধিকারী, উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, উপজেলা আ.লীগের প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিন, উপজেলা তথ্য অফিসার সিগ্ধা দাস, পৌর কাউন্সিলর মতিয়ার রহমান ফারুক, জহুরুল ইসলাম স্বপন, আব্দুল গাফফার, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডা. অমল কুমার বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন সরকার, পৌর সভাপতি পরিমল কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক জয় বিশ্বাস, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষেদের সভাপতি মনিন্দ্রনাথ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাধু খাঁ, পৌর সভাপতি লিপন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক পলাশ আচার্য, বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী বিজেস কুমার রামেকা।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ, পুটিমারি, গড়গড়ি, বেতবাড়িয়া ও খুদিয়াখালী গ্রামের দুর্গাপূজা খুলিয়াখালী শ্মশানে নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় সাতপাকে ঘুরিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা উৎসব। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ পশুরহাটে বসেছিলো হরেক রকমের খেলনা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান। রকমারি মিষ্টির দোকান তো ছিলোই। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল সোমবার বিকেলে মেহেরপুর ভৈরব নদসহ জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।

এর আগে ম-পগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় দুর্গার কপালে সিঁদুর পরিয়ে দেন। এছাড়া নিজেরাও একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। এ সময় চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান। এদিন সন্ধ্যায় মেহেরপুর শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, শ্রী শ্রী হরি ভক্তি প্রদয়িনী পূজা মন্দির, লায়েব বাড়ী পূজা মন্দির, মালোপাড়া ও হালদারপাড়া পূজা মন্দির এবং বামনপাড়া পূজা মন্দির থেকে মেহেরপুর ভৈরব নদ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। একই দিন বিকেলে মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ও মহাজনপুরে দুটি করে এবং দারিয়াপুর ও মোনাখালীতে একটি করে মোট ৬টি পূজা মন্দিরের প্রতিমা ভৈরব নদে বিসর্জন দেয়া হয়। করেনা ভাইরাসের কারণে এবার প্রতিমা নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ না করে সরাসরি ভৈরব নদে নেয়া হয় এবং প্রতিমা সমূহ বিসর্জন দেয়া হয়। এসব প্রতিমা বিসর্জনের সময় ভৈরব নদের দু’পাড়ে শ’ শ’ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এ বছর জেলায় ৪১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

বারাদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর সদরে মোমিনপুর শ্রী শ্রী রামমন্দির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যদায় দেশব্যাপী পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনা, শ্রাদ্ধঞ্জলি নিবেদন এবং প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে দেবী দূর্গা ভক্তরা পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব উদযাপন করেন। প্রতিবারের ন্যায় এ বছরও দুর্গাপূজা উপলক্ষে মোমিনপুরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। পূজামণ্ডপে আনসার, ব্যাটালিয়ান পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। মোমিনপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রভাস দাস ও সাধারণ সম্পাদক বিকাশ পাত্র বলেন, ছেউটিয়া নদীতে বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। আর এই বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এবারের পূজার সমাপ্ত ঘটে।

Comments (0)
Add Comment